পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ, পঞ্চগড়ে পৌনে ২ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

পঞ্চগড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে তরুণদের মহাসড়ক অবরোধ। শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে করতোয়া সেতুর উত্তর-পূর্ব মাথায়ছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল থামিয়ে আরোহী তরুণকে মারধরের অভিযোগে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এক দল তরুণ। এতে ইফতারের সময় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। অনেকেই সড়কে ইফতার করেছেন। সড়ক অবরোধের কারণে উভয় দিকে ভারী যানবাহন আটকে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়।

আজ শুক্রবার বিকেলে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে করতোয়া সেতুর উত্তর-পূর্ব মাথায় অবরোধ করা হয়। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া অবরোধ ইফতারের পরেও চলছিল। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে বসার আশ্বাস দিলেও বিক্ষোভকারীরা সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে সড়ক ছেড়ে দেন।

পুলিশ ও বিক্ষোভকারী তরুণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেলে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্বের অংশ হিসেবে মোটরযান আইন অনুযায়ী অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ। তখন তিন তরুণ একটি মোটরসাইকেলে শহর থেকে পুরোনো পঞ্চগড় এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশ তাঁদের গতিরোধ করে মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে নিলে বাগ্‌বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুলিশের একজন সদস্য সাবাব আবিদ নামের এক তরুণকে মারধর করেছেন অভিযোগ তুলে সড়কে বসে পড়েন তাঁরা। পাশাপাশি ওই পুলিশ সদস্যের বিচারের দাবি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, খবর পেয়ে ওই তরুণের বন্ধুরা এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। তবে কোন পুলিশ সদস্য তাঁদের মারধর করেছেন, নাম বলতে পারেননি তরুণেরা। অবরোধের সময় ভারী যানবাহন আটকা পড়লেও অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত ভারী যানবাহন আটকা পড়ে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। অবরোধকারী তরুণেরা সড়কে বসেই ইফতার করেন।

ভুক্তভোগী ও বিক্ষোভকারী সাবাব আবিদ প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড় বিষ্ণুপ্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি ২০১৫ ব্যাচের ইফতার মাহফিল ছিল বোদা উপজেলার ফুলতলা এলাকায়। গাড়িস্বল্পতার কারণে তাঁরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। চৌরঙ্গী মোড়ে  কয়েকজন পুলিশ সদস্য মোটরসাইকেলের কাগজপত্র যাচাই করছিলেন। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য এসে তাঁদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে নেন। তখন পাশ দিয়ে আরেকটি মোটরসাইকেল চলে যাচ্ছিল। সেই মোটরসাইকেলটি ধরতে তাঁদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই পুলিশ সদস্য। মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি তাঁকে (সাবাব) কিল–ঘুষি মারেন। তাঁর সঙ্গে থাকা দুজন মারার কারণ জানতে চাইলে তাঁদের মারধর করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়ির সমস্যা থাকলে আইন আছে। কিন্তু আমাদের গায়ে হাত দেবেন কেন? আমাদের দাবি, ওই পুলিশ সদস্যকে সবার সামনে সরি বলতে হবে।’  

তাহমিদ শাকির নামের একজন বলেন, ‘আমরা বিপি স্কুলের এসএসসি-২০১৫ ব্যাচের বেশির ভাগ ছাত্রই বাইরে পড়াশোনা করি। ঈদ উপলক্ষে সবাই এসেছি। আজকে আমাদের ইফতার মাহফিল ছিল। সেখানেই যাচ্ছিলাম। পুলিশ মোটরসাইকেল আটকে এভাবে গায়ে হাত দিতে পারে না। মারধর করে সাবাবের টি–শার্ট ছিঁড়ে ফেলেছে।’

অবরোধর সময় পঞ্চগড়–সংলগ্ন করতোয়া সেতুর ওপরে আটকা পড়েছিল সৈয়দপুর থেকে ঢেউটিন নিয়ে আসা একটি ট্রাক। ট্রাকে বসে ইফতার করতে করতে চালক মো. মিলন (৪৩) বলেন, ‘শুনেছি, মোটরসাইকেল আটক করা নিয়ে পাবলিকের সঙ্গে পুলিশের গন্ডগোল। এ জন্য সব গাড়ি আটকা পড়েছে। উপায় না পেয়ে গাড়িতে বসেই ইফতার করছি।’

আবু সুফিয়ান (৩০) নামের একজন গাড়িচালক বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে আটকা পড়ে আছি। ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমার স্যার গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গেছেন। আমি উপায় না পেয়ে গাড়িতে বসেই ইফতার করলাম।’

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনের সময় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন যাচ্ছিলেন। তাঁদের থামানোর জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা না থামিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। তাঁদের সামনে গিয়ে থামাতে গিয়ে একজনের গায়ে ধাক্কা লেগেছে। পরে ছেলেরা ইস্যুটিকে অন্যভাবে তুলে ধরে রাস্তা আটকে রাখে। পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন। এখানে তদন্ত ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারও অপরাধ থাকলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।