কেশবপুর পৌরসভার কাজে ছাত্রদল নেতার হস্তক্ষেপ, কর্মবিরতির ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
দেরি হওয়ায় কিছু উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ করতে যশোরের কেশবপুরের পৌরসভার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ছাত্রদলের এক নেতা হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনার প্রতিবাদে পৌরসভার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা অফিসে তালা দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
কেশবপুর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের ২৭ মিটার রাস্তা আরসিসিকরণ, কেশবপুর পৌর কারিগরি কলেজের উন্নয়ন ও কেশবপুর প্রেসক্লাবের একটি ল্যাট্রিন নির্মাণ বাবদ ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৩ টাকার কিছু উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে। এসব কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের ২১ মে। সমাপ্তির তারিখ ছিল ওই বছরের ১৯ নভেম্বর। কাজ শেষ করতে পরে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের রাস্তা ঢালাইকরণের কাজ চলমান। কাজটি দেরিতে কেন করা হচ্ছে, তা জানতে চান যশোর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি ও কেশবপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মেহেদী হাসান। এ সময় তিনি পৌরসভার সচিব মোশারফ হোসেনকে হুমকি–ধমকি দেন। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং ওই কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য হুমকি দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজটি করাচ্ছেন পৌরসভার অপসারিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবাদাত সিদ্দিকী ওরফে বিপুল। এ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফেয়ার হলেও করছেন নিজাম উদ্দিন গাজী নামের এক ব৵ক্তি। তিন-চার মাস ধরে সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ের ভেতরে জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় সেখানকার রাস্তাটি নির্মাণের কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে কাজ দেরি করে শুরু হয়েছে। এ বিলম্বে কারও হাত নেই। তারপরও কাজ দেরি করার জন্য পৌরসভার সচিবকে ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে গেছেন। কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে গেছেন।
পৌর সচিব মোশারফ হোসেন অভিযোগ করেন, তাঁদের অফিসে এসে বিএনপি ও দলটির সহযোগী কিছু নেতা–কর্মী অব্যাহতভাবে বিভিন্ন ফাইল ওলটপালট করাসহ নানাভাবে পৌরসভার কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ভয়ভীতি প্রদান করছেন। ফলে তাঁরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। মোশারফ বলেন, এভাবে হুমকি দিলে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যাবে না বলে তাঁরা মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে অফিস তালাবদ্ধ করে যে যাঁর বাড়িতে চলে গেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সেবা প্রদান করা থেকে বিরত থাকবেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান বলেন, তিনি একবার পৌরসভায় গিয়েছিলেন, ওই কাজ সম্পর্কে শুধু জানতে চেয়েছেন। সেখানে কাউকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি নজরে আনা হলে যশোর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাজিদুর রহমান বলেন, ব্যক্তির অপরাধ দল নেবে না। তদন্ত করে যদি মেহেদী হাসানোর বিরুদ্ধে ঘটনার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পৌরসভার সচিবকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাটি শুনেছেন জানিয়ে কেশবপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কেউ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করলে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। পৌরসভার কাজে হস্তক্ষেপের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।