বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পরাজয়ের পর রাজশাহীতে বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর

ব্রাজিলের পরাজয়ের পর রাজশাহীতে বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার নগরের বন্ধগেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বকাপ ফুটবলের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ব্রাজিল দলের পরাজয়ের পর রাজশাহীতে বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে ম্যাচপরবর্তী সময়ে নগরের বন্ধগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দাবি, পূর্বশত্রুতার জেরে এলাকার কয়েক ব্যক্তি এ হামলা করেছেন। হামলায় দুজন আহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিরা হলেন বন্ধগেট এলাকার মো. আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মো. হোসাইন রিফাত (২২) ও মো. এহসান রায়হান (২০)। রাতেই তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ ঘটনায় ওই তরুণদের মা লাবণী (৪০) রাতেই নগরের রাজপাড়া থানায় বন্ধগেট নতুন বিলসিমলা এলাকার মো. মিলন (৩৫), মো. হানিফ (২৮), মো. মুন (৩২) ও মো. রাহিমের (২০) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বাদী লাবণী উল্লেখ করেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাঁর বাসার পাশে বিশ্বকাপ খেলা দেখার সময় তাঁর ছেলে রিফাত ও রায়হানকে অভিযুক্ত মিলন ধাক্কা দেন। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে কয়েকজন মিলে তাঁদের মারধর শুরু করেন। পূর্বশত্রুতার জেরে তাঁরা ইট দিয়ে আঘাত করেন এবং উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় বাড়ির গেট খুলে বাইরে বের হলে তাঁর দুই ছেলে দৌড়ে বাসায় ঢুকে যান। তিনি তৎক্ষণাৎ বাসার গেট বন্ধ করে দেন। এ সময় রামদা, লোহার পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে হামলা চালান তাঁরা। ঘরের প্রধান ফটক ও জানালা ভাঙচুর করেন। তাঁদের ঘরে হামলার পাশাপাশি তাঁর ভাশুরের ঘরের জানালা–দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন তাঁরা। পরে এলাকাবাসী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে তাঁরা রক্ষা পান। যাওয়ার সময় তাঁরা দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে গেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

গতকাল রাতে এই মাঠে বড় পর্দায় ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে ফুটবল খেলা দেখেন এলাকাবাসী। শনিবার নগরের বন্ধগেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সরেজমিন দেখা গেছে, বন্ধগেট রেলক্রসিং থেকে ২০ মিটার দূরে ডান পাশে একটি পরিত্যক্ত ফাঁকা জায়গায় ব্যাডমিন্টনের খেলার মাঠ। ওই মাঠের পাশে সাততলা ভবনের দেয়ালে টাঙানো সাদা কাপড়। রাতে ওখানেই ফুটবল খেলা দেখেন লোকজন। ওই জায়গা থেকে ২০ মিটার দূরে ভুক্তভোগী তরুণদের বাড়ি। স্থানীয় লোকজন বাড়ির ফটকের ভাঙা অংশ দেখে আলাপ করছেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল টিন দিয়ে তৈরি বাড়ির প্রধান ফটকের নিচের অংশ কাটা পড়ে আছে। পাশেই একটি জানালার কাচসহ ভাঙা। বাড়ির পূর্ব পাশে দুটি জানালায় দায়ের কোপ দেখা গেছে। পাশেই প্রতিবেশী আরেকজনের বাড়ির দরজায়ও কোপ দেওয়া হয়েছে।

লাবণী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় ছেলেদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে। এটা শুধু খেলার জন্য নয়। খেলাকে অজুহাত বানিয়ে তাঁর দুই ছেলেকে মারতে চেয়েছিল। ব্যর্থ হয়ে বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তা চান।

লাবণীর স্বামী আবদুল কুদ্দুস বিমানবাহিনীতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, খুব শঙ্কার মধ্যে আছেন। তিনি কালই চলে যাবেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় খেলাকে কেন্দ্র করে বাড়িঘরে হামলার খবর তাঁরা পান। রাতেই তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি কোনো পূর্বঘটনার জেরে কি না, সেটিও তদন্ত করে বের করা হবে।