শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া দামে পোষাবে না, হোটেল বন্ধ রাখলেন ব্যবসায়ীরা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খাবারের দাম নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দোকান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় হল রোড, ২০ ফেব্রুয়ারিছবি: প্রথম আলো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সামনে থাকা খাবারের দোকানগুলোতে (ভাতের হোটেল) খাবারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার থেকে ওই দাম কার্যকর করার কথা। কিন্তু ওই দামে হোটেল চালানো সম্ভব নয় ভেবে হোটেল বন্ধ রেখেছেন মালিকেরা। আজ সকাল থেকে হোটেলগুলো বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী।

হোটেলের মালিকেরা বলছেন, ১০-১২ দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে হোটেলে খাবারের দাম কমানোর আহ্বান জানান। এতে সাড়া দিয়ে এক সপ্তাহ আগে মালিকেরা খাবারের দাম কিছুটা কমিয়ে নতুন দামের তালিকা টাঙিয়ে দেন। গত কয়েক দিন সেভাবেই চলছিল। কিন্তু গত রোববার রাতে কিছু শিক্ষার্থী প্রতিটি হোটেলে গিয়ে একটি তালিকা দিয়ে ওই দামে খাবার বিক্রি করতে বলেন। না মানলে হোটেল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা এড়াতে এবং ওই দামে খাবার বিক্রি পোষাবে না বলে তাঁরা হোটেল বন্ধ রেখেছেন।

শিক্ষার্থী ও হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকের সীমানার বাইরে ছেলেদের হলের সামনে কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছে। সেখানে ১০-১২টি খাবারের হোটেল আছে। এসব হোটেলে প্রতিদিন আট শতাধিক শিক্ষার্থী খাওয়াদাওয়া করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বা ক্যানটিনের তুলনায় বাইরের হোটেলে খাবারের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। এ জন্য চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা মিলে হোটেলগুলোর খাবারের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ওই দামের চেয়ে বেশি দাম যেন না দেওয়া হয় সেটি নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচারণা চালানো হয়। আজ থেকে ওই দাম বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে শুনছেন, বাইরের হোটেলগুলো বন্ধ।

চতুর্থ বর্ষের পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, যখন বয়লার মুরগির দাম ৩০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল, তখন হোটেলের মালিকেরা খাবারের দাম বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু দাম কমে যাওয়ার পরও তাঁরা আগের দামেই বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি চালের দাম ৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি প্লেট ভাতের দাম বাড়িয়েছেন ৫ টাকা করে। শুধু তা–ই নয়, হলের ডাইনিং বা ক্যানটিনে ভাত, মাছ, মাংসের যে দাম; বাইরের হোটেলে তার চেয়ে ৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি। একবার বাইরে খেতে গেলে ৮০ থেকে ১০০ টাকা চলে যায়, যা একজন শিক্ষার্থীর কাছে খুবই ব্যয়বহুল। এ জন্য হলের খাবারের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাইরের হোটেলে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তবে তাঁরা কাউকে হুমকি দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি হোটেল মালিক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা খাবারের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মেনে চলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হোটেলের মালিকেরা দাম কমিয়ে যেটা নির্ধারণ করেছিলেন, তার চেয়েও শিক্ষার্থীদের দেওয়া তালিকায় প্রতিটি জিনিসের দাম ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম। ওই দামে খাবার বিক্রি করলে লোকসান হবে। তা ছাড়া দোকানের ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন থেকে শুরু করে সবকিছু বাড়তি। এ ক্ষেত্রে তাঁদের টিকে থাকা হুমকির মুখে পড়েছে।

হোটেলের মালিকদের মূল্যতালিকা অনুযায়ী প্রতি প্লেট ভাত ১৫ টাকা, অর্ধেক প্লেট ৮, রুই মাছ ৬০, মৃগেল ৫০, পাঙাশ ৫০, মুরগি ৫০ থেকে ৮০, গরু ১২০ ও রান্না ডিম ২৫ টাকা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী প্রতি প্লেট ভাত ১২ টাকা (১ কেজি চালে ১০ প্লেট ভাত), রুই ৪০, পাঙাশ ৩৫, মৃগেল ৩৫, মুরগি ৪০ থেকে ৬৫, গরু ৯০ ও রান্না ডিম ২০ টাকা। এ ছাড়া সকালের নাশতার আইটেমেও ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কম দাম নির্ধারণ করার কথা বলেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দায়িত্বে থাকা সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালক রাজু রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জেনেছি বাইরের হোটেলগুলো বন্ধ আছে। এ কারণে ক্যাম্পাসের ক্যাফেটেরিয়া, ক্যানটিন, ডাইনিংয়ে পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেউ যেন খাবারের সংকটে না ভোগেন, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরের হোটেলে দাম নির্ধারণে সম্পৃক্ত নয় বলে তিনি দাবি করেন।