৬০-৭০ লাখ টাকা দেনা, পরিকল্পনা ছিল বাবাকে হত্যা করে সম্পদ বেচে দেনা শোধ করবেন
নাটোরের সিংড়ায় মো. ওসমান গনি ওরফে বাবু (৫২) নামের এক ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় তাঁর ছেলে মো. আসাদুজ্জামান ওরফে বল্টু ১৯ দিন পর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার আসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি বাবাকে গুলি করার কথা স্বীকার করলে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার বিকেলে সিংড়া আমলি আদালতে সোপর্দ করা হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার হোসেনের কাছে আসাদুজ্জামান ১৬৪ ধারাায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
অপর দিকে ওসমান গনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত। তবে তাঁর শরীর থেকে এখনো গুলিটি বের করা হয়নি বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। শিগগিরই তাঁর অস্ত্রোপচার করা হবে।
ওসমান গনি সিংড়ার চৌগ্রাম ইউনিয়নের চৌগ্রাম গ্রামের মৃত আবদুল প্রামাণিকের ছেলে। তিনি স্থানীয় বাজারে ধান-চালের ব্যবসা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টার দিকে ওসমান গনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিন চৌগ্রামের পারুহারপাড়া মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে যান তিনি। মসজিদের সিঁড়িতে উঠতেই কে বা কারা তাঁর পেছন থেকে গুলি করেন। গুলিটি তাঁর কোমরের পেছনে বাঁ পাশে লাগে। স্বজনেরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
ঘটনার দিন ওসমান গনির মেয়ে মোছা. বেবি খাতুন সিংড়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ এ মামলায় তদন্তের পর গতকাল তাঁর একমাত্র ছেলে আসাদুজ্জামানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আসাদুজ্জামান বাবাকে গুলি করার কথা স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সিংড়া আমলি আদালতে পাঠালে আসাদুজ্জামান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার হোসেনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংড়া থানার উপপরিদর্শক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আসাদুজ্জামান পুলিশ ও আদালতকে জানান, তাঁর ব্যক্তিগত ৬০-৭০ লাখ টাকা দেনা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে তিনি বাবাকে হত্যার পর সম্পদ বিক্রি করে দেনা শোধ করবেন এবং পরে সব সম্পদ ভোগ করবেন—এমন পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে পিস্তল কিনে ফজরের নামাজে যাওয়ার সময় বাবাকে অন্ধকারে গুলি করেন।
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসমাউল হক বলেন, ব্যবসায়ীকে গুলির ঘটনায় ১৮ দিনের তদন্ত শেষে তাঁর একমাত্র ছেলেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি পিস্তল দিয়ে তাঁর বাবাকে গুলির কথা স্বীকার করেন। তাঁকে আজ আদালতে পাঠানো হয়। আদালত ১৬৪ ধারায় তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।