৩৪ বছর ইমামতির পর বিদায়বেলায় তিনি কাঁদলেন, গ্রামবাসীকে কাঁদালেন
টানা ৩৪ বছর একই মসজিদে ইমামতি করেছেন, স্থানীয় শিশুদের মক্তবে পড়িয়েছেন। দীর্ঘ সময় এক গ্রামে থাকার পর বার্ধক্যের কারণে এবার বিদায় নিলেন। বিদায়বেলায় তাঁকে দেওয়া হয়েছে সংবর্ধনা। সেখানে তিনি কাঁদলেন, কাঁদালেন গ্রামবাসীকেও। ওই ইমামের নাম হাফেজ আবদুল্লাহ (৬৫)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের মসজিদ প্রাঙ্গণে হাফেজ আবদুল্লাহর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শিক্ষক ফজুলুল হক মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান, আইনজীবী নূরে আলম, ইউপি সদস্য শাহজাহান খান, সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। এ সময় সেখানে কয়েক শ গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
হাফেজ আবদুল্লাহ নাসিরনগর উপজেলার কুলিগুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৯০ সালে তিনি নোয়াগাঁও পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে ইমাম ও মক্তবের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। টানা ৩৪ বছর তিনি একই মসজিদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বার্ধক্যের কারণে বিদায় নেন।
সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ইমামকে বিদায় দিতে চাননি। ইমাম স্বেচ্ছায় বিদায় নিয়েছেন। বিদায়ী বক্তব্যে হাফেজ আবদুল্লাহ কেঁদেছেন। তাঁর সঙ্গে কেঁদেছেন গ্রামের শত শত মানুষ। পরে একাধিক মাইক্রোবাসে করে ইমামকে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন গ্রামবাসী। সঙ্গে নানা উপহারের পাশাপাশি দেড় লাখ টাকাও দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহমান মৈশান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শৈশবের শিক্ষক হাফেজ আবদুল্লাহ ছিলেন অসাধারণ, সহজ-সরল ব্যক্তি। পুরোদমে অসাম্প্রদায়িক মানুষ। কাউকে কটুকথা বলতেন না। সমাজের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে তাঁর ছিল সুসম্পর্ক। সমস্যা জর্জরিত সমাজে তিনি দাঙ্গা-ফ্যাসাদ নিরসন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।’