প্রখর রোদের কাল ভাদ্র আর আশ্বিন মাস। এই দুই মাসে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যায় জীবন। ময়মনসিংহ অঞ্চলের গ্রামে বসবাসকারী মানুষের মতে, আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে শেষ রাতের দিকে ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনটা টের পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে গত বছর আশ্বিন পার হয়ে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়েও গ্রামের আবহাওয়া ছিল বেশ উষ্ণ। ভাবা হয়েছিল, এবারও কার্তিকের শেষ দিকে হয়তো প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হবে।

তবে এমন ধারণাকে পাল্টে দিয়ে এবার আবারও মাঝ–আশ্বিন থেকেই ময়মনসিংহের গ্রামগুলোতে কিছুটা শীতের আমেজ পাওয়া যাচ্ছিল। আর ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ যেন সেই আবহে নতুন মাত্রা যোগ করে দিল! এবার কার্তিকেই বেশ ভালো করে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ।

ঋতু পরিক্রমায় আশ্বিন মাসে শুরু হেমন্তকাল। প্রকৃতিপ্রেমীদের মতে, হেমন্তকালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই ঋতুতে ভোরে হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করে। সকালে সবুজ বিস্তৃত আমন ধানের খেতে জমা হয় শিশির। সকালের নরম রোদের ছটায় সে শিশিরবিন্দুর দৃশ্য হয়ে ওঠে মনোমুগ্ধকর। সকালে শিশিরভেজা মাটিতে ছড়িয়ে থাকে বিশেষ এক ঘ্রাণ। হেমন্তের শুরুতে ভরদুপুরের রোদেও কিছুটা মিষ্টি আমেজ পাওয়া যায়। আর দুপুরের পর থেকেই সূর্য যেন আস্ত যেতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

শীতের আমেজ শুরু হয় বলে হেমন্তকাল অনেকের কাছে খুব প্রিয় ঋতু। হেমন্তকালের শুরু থেকেই দিন ছোট হতে থাকে। আর বাড়তে থাকে রাতের ব্যাপ্তিকাল। যে কারণে কাকডাকা ভোরে অনেকের ঘুম ভাঙে। ঘুম ভাঙার পর অনেকে বাইরে বের হয়ে উপভোগ করতে চান কুয়াশার সকাল।

ময়মনসিংহের প্রকৃতিতে এবার আশ্বিনের শুরু থেকেই হেমন্তের প্রকৃত রূপের দেখা মিলছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে যাওয়ার পর তিন থেকে চার দিন সকালে ছিল পুরোপুরি শীতের আমেজ। এরপর দিনের বেলায় তাপ একটু বেশি থাকলেও সেটা অসহনীয় নয়। রাতে প্রকৃতি বেশ আরামদায়ক হয়ে ওঠে।
ময়মনসিংহে বসবাসকারী কবি শামসুল ফয়েজ বলেন, হেমন্ত খুব উপভোগ্য ঋতু। শিশিরস্নাত ধানখেতের সৌন্দর্য মনকে প্রফুল্ল করে। এই ঋতুতে শেফালি ফুল ফোটে। এ ছাড়া হেমন্তকাল হচ্ছে বাংলার নবান্নের কাল।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে সাধারণত কার্তিকের শেষ দিকেই শুরু হয়ে যায় আমন ধান কাটা। অগ্রহায়ণে যেন ধান কাটার ধুম পড়ে। নতুন ধানের ঘ্রাণ ছড়িয়ে থাকে গ্রামগুলোতে। বাড়িতে বাড়িতে চলে নতুন ধানের পিঠা তৈরির ধুম। আমন ধান কাটা হয়ে গেলে ফসলের মাঠগুলো হয়ে যায় খেলার মাঠ। দাঁড়িয়াবান্ধা আর গোল্লাছুট খেলা এখন আর নেই। এখন হেমন্তে ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন খেলায় মেতে ওঠে গ্রামের শিশু-কিশোরেরা।