গফরগাঁওয়ের গ্রামে আলো ছড়ানো বঙ্গবন্ধু বইমেলা

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শাঁখচূড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধু বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীরাছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে নানা ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে মেলার আয়োজন প্রতিবছরই হয়ে আসছে। দল বেঁধে এসব মেলায় যান স্থানীয় নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরীরা। অন্যদিকে বইমেলার মতো আয়োজনগুলো বেশির ভাগ সময়েই শহরকেন্দ্রিক। সাধারণত শহুরে শিক্ষিত মানুষের দল এসব মেলায় যায়। তবে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামেই এবার বইমেলার আয়োজন করেছে একটি সংগঠন।

বঙ্গবন্ধু বইমেলা নামে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে শাঁখচূড়া গ্রামে। গতকাল শনিবার দিনব্যাপী এই মেলায় ছিল শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি প্রদান ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। এসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে গ্রামটি উৎসবের গ্রামে পরিণত হয়। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে দল বেঁধে নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা মেলায় আসে।

বঙ্গবন্ধু বইমেলার আয়োজন করে স্থানীয় মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন ও পাঠাগার। এর আগে ২০২১ ও ২০২২ সালে দুইবার এই বইমেলার আয়োজন করা হয়।

বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব সাইফুস সালেহীন জানান, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে আলোকিত করতে তাঁদের এই আয়োজন। প্রথম বছর ৮০ শতাংশ ছাড়ে ও দ্বিতীয় বছর ৬০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হয় বই। এবার ৫০ শতাংশ ছাড়ে বই বিক্রি হয়েছে। বইয়ের ভর্তুকি মূল্য পরিশোধ করে মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন ও পাঠাগার। প্রথম বছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। দ্বিতীয় বছর আয়োজন ছোট পরিসরে ছিল। সেবারও এক দিনে দেড় লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। ঢাকার বিভিন্ন প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান সরাসরি এবং কিছু প্রতিষ্ঠান স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দোকান দেয়। এবার মেলায় মোট ২০টি বইয়ের দোকান ছিল।

শাঁখচূড়া গ্রামের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী-পুরুষেরা মেলায় আসেন বই কিনতে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল দুপুরে বইমেলায় দেখা যায়, শাঁখচূড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ ১৬০ টাকা মূল্যের একটি বই ৮০ টাকায় কেনে। বইটি কেনারে পর দৌড়ে চলে যায় তার সহপাঠীদের আড্ডায়। সেখানে গিয়ে খুব আনন্দের সঙ্গে নিজের কেনা বইটি দেখায়। নূর মোহাম্মদ বলে, বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে নিজেই পছন্দ করে একটি বাছাই করা সেরা ধাঁধার বই কিনেছে। তার সহপাঠীরা অন্য বই কিনবে। সবাই পালাক্রমে সবার বই বাড়ি নিয়ে গিয়ে পড়বে।

গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে মেলায় আসে দুই বোন কায়ানাত আলম ও সাফুরা আলম। কায়ানাত নবম শ্রেণিতে আর সাফুরা পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। তারা জানায়, তিন বছর ধরে মেলার আয়োজন হলেও এবারই প্রথম এসেছে। মেলাই অনেক বই দেখা অবাক হয়েছে তারা।

বই বিক্রির পাশাপাশি মেলায় বিভিন্ন স্টলের মতো লোকজ সুন্দর নামের একটি স্টলে বিক্রি হচ্ছিল আঁকা ছবি। সেখানে বসে তাৎক্ষণিকভাবে স্কেচ করে দিচ্ছিলেন শিল্পী জ ই সুমন। তা দেখে অবাক হচ্ছিলেন মেলায় আসা গ্রামের লোকজন।

শাঁখচূড়া গ্রামের বঙ্গবন্ধু বইমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়
ছবি: প্রথম আলো

সকালে বইমেলার উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ। তিনি একই সঙ্গে মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশন ও পাঠাগার মেধাবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ফাহমি গোলন্দাজ বলেন, আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। এ ধরনের বইমেলার আয়োজন গফরগাঁওকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুসলেহ উদ্দিন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাহিত্যিক ফাইজুস সালেহীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। সভাপতির বক্তব্যে ফাইজুস সালেহীন বলেন, ‘শাঁখচূড়া গ্রামকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোও আলোকিত করার প্রয়াসে আমরা এ বইমেলার আয়োজন করি। এতে আমাদের আগামী প্রজন্ম বইমুখী ও আলোকিত মানুষ হবে, এটা আমাদের প্রত্যাশা।’