‘জিনের বাদশাহ’র সাহায্যে উপজেলা নির্বাচনে জেতানোর কথা বলে...

পঞ্চগড় জেলার মানচিত্র

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে জয়ী হবেন—এই আশ্বাস দিয়েছিল এক ব্যক্তি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ‘জিনের বাদশাহ’ পাঠিয়ে ফলাফল তাঁর পক্ষে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে এ কাজের জন্য ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যান তাঁরা। কিন্তু ফলাফলে দেখা যায়, ছয় প্রার্থীর ওই প্রার্থীই সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন।

তখন ওই প্রার্থী বুঝতে পারেন, তাঁকে বোকা বানানো হয়েছে। পুলিশের শরণাপন্ন হলে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় কথিত জিনের বাদশাহ মিলন ইসলামকে (৫২)। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর বাড়ি তল্লাশি করে হনুমানি পয়সা, ডলার, পিতলের কলস জব্দ করা হয়েছে।

প্রতারণার শিকার ব্যক্তির নাম মহসিন আলী (৬৪)। তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার রাতে প্রতারণার শিকার ব্যক্তি বোদা থানায় মিলন ইসলামসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ থেকে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। রাতেই কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে মিলন ইসলামকে গ্রেপ্তার করে থানা-পুলিশ। মিলন ইউনিয়নের উৎকুড়া এলাকার বাসিন্দা। বুধবার বিকেলে তাঁকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

থানা-পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মহসিন আলী নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেন। তাঁর প্রতীক ছিল হেলিকপ্টার। এ সময় মিলন ইসলাম তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. বুলু ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। টাকার বিনিময়ে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ‘জিনের বাদশা’ পাঠিয়ে নির্বাচনে মহসিনকে জয়ী করার প্রস্তাব দেন। পরে চক্রের সদস্যরা মহসিন আলীর সঙ্গেও কথা বলেন। একপর্যায়ে মহসিন আলী প্রস্তাবে রাজি হন। তখন মিলন ইসলামসহ তাঁর চক্রের সদস্যরা কয়েক দফায় মোট ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তাঁর থেকে।

গত ২১ মে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফলে দেখা যায়, মহসিন আলী সবচেয়ে কম ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মহসিন আলী ওই প্রতারক চক্রের সদস্যদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সর্বশেষ গত ২২ মে সন্ধ্যায় মহসিন আলী তাঁর লোকজন নিয়ে মিলন ইসলামের বাড়িতে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি মহসিন আলী তাঁকে হত্যা ও গুমের হুমকিও দেন। উপায়ন্তর না দেখে তিনি বোদা থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হন।

মহসিন আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা ছয়জন প্রার্থী ছিলাম, তার মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছি। আমি সৈয়দপুর পৌরসভার নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা। আমার গাড়িচালকের বাড়ি বোদা উপজেলায়। প্রথমে তাঁর সঙ্গেই ওই চক্র যোগাযোগ করে। তার কথায় আমিও রাজি হয়ে তাঁদের কাছে যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে যে খাবার খাওয়ানো হয়েছিল, তার মধ্যে মাল্টা ছিল। ওই মাল্টার রং অস্বাভাবিক ছিল। সেসব খাবার খাওয়ার পর আমি তাঁদের কথামতো চলতে থাকি।’

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, মিলন ইসলাম প্রাথমিকভাবে নির্বাচনের জেতানোর কথা বলে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি হনুমানি পয়সা, ৫০ ইউএস ডলার, ৪৮ সিঙ্গাপুরী ডলার, কথিত আলাদিনের চেরাগ, একটি পিতলের কলস জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া মিলন ইসলামকে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত মিলন ইসলামকে জেলহাজতে (কারাগারে) পাঠিয়েছেন। এই মামলায় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।