বসতভিটা বিক্রি করে হলেও ছেলের চোখের চিকিৎসা করাতে চান বাবা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ছররা গুলিতে চোখে আঘাত পেয়েছিলেন আল-আমিন। অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে ভারতে যেতে পারছিলেন না। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, তাঁর বিভাগ ও বন্ধুদের সহায়তায় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গত ২৫ মে ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসা নিতে যান।
সেখানে যাওয়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু চোখের অস্ত্রোপচার করার জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আল-আমিন ও তাঁর বাবা।
আল-আমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সাতক্ষীরা সদর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুস সেলিমের ছেলে।
আল-আমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভাগ ও বন্ধু-বান্ধবদের সহায়তায় মোট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে চেন্নাই এসেছি। কিন্তু এরই মধ্যে আসা খরচ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানিয়েছেন, সার্জারি করলে চোখে দেখতে পারব ঠিকই, কিন্তু একটু ঝাপসা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে রেটিনা থেকে রক্তপাত হচ্ছে। চিকিৎসক চাচ্ছেন, রেটিনাল অ্যাটাচমেন্ট করতে। সার্জারি করতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমার কাছে আর ৩৬ হাজার টাকা আছে। এ জন্য চিকিৎসা ছাড়াই দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার পর ট্রেনের শিডিউল পরিবর্তন হচ্ছে। তাই টিকিট কাটার পরও টাকা রিফান্ড দিচ্ছে। এ জন্য দেশে আসতে দেরি হচ্ছে।’
গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাসচালকের বাগ্বিতণ্ডার জেরে স্থানীয় বিনোদপুর বাজারে সংঘর্ষ বাধে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলা ও সংঘর্ষে আহত হন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনকে ভিট্রিয়ল রেটিনাল ইনজুরির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় পাঠানো হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যে ভারতের চেন্নাইয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শিক্ষার্থী। তবে চিকিৎসার পরও চোখে দেখতে পারছেন না মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম। ঝাপসা দেখছেন ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী মিসবাহুল ইসলাম।
আল-আমিনের সঙ্গে ভারতে গেছেন তাঁর বাবা আবদুস সেলিম। তিনি বলেন, চোখের পরীক্ষা ও যাতায়াত খরচসহ অন্যান্য খরচ করে তাঁদের কাছে আছে ৩৬ হাজার টাকার মতো আছে। এই টাকা দিয়ে চিকিৎসা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। চিকিৎসা করতে আরও অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু তাঁদের কাছে তো টাকা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, চিকিৎসা করানোর পর কাগজপত্র জমা দিলে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু চিকিৎসাটা তো করা লাগবে, তাই না? এখন সন্তান তো আমার, যেভাবেই হোক চিকিৎসা করাতে হবে। ভাবছি দেশে ফিরে বসতভিটার একটি অংশ বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আল-আমিনের বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁকে এক লাখ টাকা সহায়তা করা হয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে তাঁকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভারতে যাওয়ার পর কোনো যোগাযোগ করেনি। দেশে ফিরে আসার খবরটি আপনার (প্রতিবেদকের) কাছ থেকেই জানলাম। আমরা যোগাযোগ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’