আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিলেন সাবেক আইজিপি শহীদুল

সাবেক আইজিপি শহীদুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয় ফরম জমা দিয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর-১ আসন (সদর-জাজিরা) থেকে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় হলেও তিনি শরীয়তপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুর-১ নির্বাচনী এলাকার সদর ও জাজিরায় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল আছে। এই এলাকা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে আছে বলে দাবি শহীদুল হকের। তাই দলের মধ্যে থাকা বিভেদ নিরসন করে শান্তি স্থাপন করার জন্য এবং সদর ও জাজিরার উন্নয়নে ভূমিকা নিতে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হতে চান তিনি।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সদর ও জাজিরা উপজেলায় ২৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ২টি পৌরসভা আছে। এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন (অপু) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হলে গতকাল সোমবার পর্যন্ত শরীয়তপুর-১ আসনের জন্য ১২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী তা সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক, সাবেক পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আলীম ব্যাপারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী জামিল প্রমুখ।

জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তি নিয়ে ওই নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ আছে। তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে একে অপরের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাবেক আইজিপি শহীদুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেওয়ায় সেটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শহীদুল হকের বাড়ি শরীয়তপুর-২ নির্বাচনী এলাকার নড়িয়া উপজেলার নরবালাখানা গ্রামে। তাঁর ছোট ভাই ইসমাইল হক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আরেক ভাই নুরুল হক ব্যাপারী নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার পর শহীদুল হক গ্রামের বাড়িতে তাঁর মা–বাবার নামে মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিলেও কখনো আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী স্থানীয় নেতাদের প্রায় সবারই আলাদা আলাদা নেতা-কর্মী বাহিনী আছে। প্রত্যেকেই আলাদা বলয়ে রাজনীতি করেন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেন না। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন শহীদুল হক।

এসব বিষয়ে শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায়। এখন দল থাকবে সুসংগঠিত। জনসাধারণের মঙ্গল করতে হলে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকতে হবে। কিন্তু শরীয়তপুর-১ নির্বাচনী এলাকায় তা অনুপস্থিত। এখানে নেতায়–নেতায় বিরোধ। সাধারণ মানুষ এসব ঘটনায় বিরক্ত, তাঁরা এসব আর দেখতে চান না। এলাকায় কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি। দলের তৃণমূলের অনেক নেতা ও সুশীল সমাজের লোকজন তাঁকে রাজনীতিতে আসার অনুরোধ করেছেন বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ঐক্যের প্রতীক হতে পারব। তাই সংসদ সদস্য হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী যদি যোগ্য মনে করেন, তাহলেই নির্বাচন করব।’ তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং কর্মজীবনে জঙ্গি দমন, হেফাজতের বিশৃঙ্খলা দমন, পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস দমনে অনেক কাজ করেছেন দাবি নিয়ে ভোটের মাঠে থাকতে চান।

শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেদুর রহমান খোকা সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব, বিভেদ থাকা স্বাভাবিক ঘটনা। শরীয়তপুর-১ নির্বাচনী এলাকায়ও তেমন আছে। সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ওই আসনে মনোনয়ন চান। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, সবাই মিলে তাঁর বিজয় নিশ্চিতে কাজ করবেন তাঁরা।