কক্সবাজারে প্যারাবন নিধনের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ আদালতের

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপের প্যারাবন নিধন করা হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিমে পাশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ সৈকতের প্যারাবন নিধন করে কিংশুক ফার্মস লিমিটেডের রিসোর্ট ও মৎস্য খামার তৈরির ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার বন আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফ এ আদেশ দেন।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর অনলাইনে ‘কক্সবাজারের প্যাঁচারদ্বীপ: প্যারাবন দখল করে চলছে রিসোর্ট বানানোর কাজ’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর প্যারাবন দখলের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিলেন আদালত।

কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আশেক ইলাহী শাহাজান নুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্যারাবন দখল করে কিংশুকের রিসোর্ট তৈরির ঘটনা স্বতন্ত্রভাবে সরেজমিন তদন্ত করে আগামী ৩ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের পাশাপাশি প্যারাবনের (ঘটনাস্থল) মালিকানা নির্ধারণ, ঘটনাস্থলের খতিয়ান, মৌজা, দাগ নম্বর ও চৌহদ্দী নির্ধারণ, অপরাধের আলামত জব্দ করা, সংশ্লিষ্ট অপরাধ কে বা কারা সংঘটিত করেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনের জবানবন্দি ও সাংবাদিকদের সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এসব ঘটনায় আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমলে নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।

আদালতের আরজিতে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনের ওই প্রতিবেদন আদালতের গোচরীভূত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পশ্চিম পাশে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন প্যাঁচারদ্বীপ এলাকার ভরাখালে সৃজিত প্যারাবন দখল করে তাতে তৈরি হয়েছে ৭০০-৮০০ ফুট লম্বা সীমানাদেয়াল। এক্সকাভেটর দিয়ে সেখানে মাটির বাঁধ ও যান চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। প্যারাবনের বিরানভূমির কিছু অংশ ভরাটের পর সেখানে তৈরি হবে রিসোর্ট। আর কিছু অংশে হবে মৎস্য খামার। এ বিষয়ে বন বিভাগ বা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই। যেখানে এসব কাজ চলছে, সেখানে ‘কিংশুক ফার্মস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। তবে সেখানে মালিকের নাম ও যোগাযোগের কোনো ফোন নম্বর দেওয়া নেই।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঢাকার ওই প্রতিষ্ঠানটিকে প্যারাবন দখলে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য কামাল আহমদ ওরফে কামালসহ কয়েকজন। কিংশুক কর্তৃপক্ষ রিসোর্ট ও মৎস্য খামার তৈরির জন্য প্যারাবনের জায়গাটি কিনেছে। এখন প্যারাবন উজাড় ও রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। তাতে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ১৫-২০ দিন ধরে প্যারাবন নিধন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং দুই পাশে ইটের দেয়াল তোলা হলেও উপজেলা প্রশাসনের কেউ সেখানে যাননি। বন কর্মকর্তারা বলছেন, প্যারাবনের জায়গাটি খাস খতিয়ানভুক্ত। ব্যবস্থা নিলে রামু উপজেলা প্রশাসন নিতে পারে। তবে রামুর ইউএনও বলেন, প্যারাবনের জায়গাটি বন বিভাগের হতে পারে। প্যারাবন নিধন করে সেখানে সীমানাপ্রাচীর, বেড়িবাঁধ ও যান চলাচলের রাস্তা তৈরির কথা তাঁকে কেউ জানাননি। তবে এ ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।


প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে আদালতের মনে হয়েছে, ঘটনাস্থলের (প্যারাবন) মালিকানা–সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপিত হলে উপজেলা প্রশাসন রামু এবং কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ উভয়ই এড়িয়ে যায়। বনভূমি কিংবা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্যারাবন নিধনের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান প্যারাবন নিধন করলে তা বন আইন-১৯২৭–এর অধীনে বন অপরাধ ও ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হয়।

আরও পড়ুন