শেরপুরে হেমন্তের বাতাসে তুলসীমালা ধানের সুবাস
হেমন্তের বিকেল। মাঠজুড়ে ছড়ানো তুলসীমালা ধানগাছগুলো শীতল বাতাসে দুলছে। দূর থেকে সেই বাতাসে ভেসে আসছে এ ধানের মিষ্টি গন্ধ। শেরপুরের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলার মাঠজুড়ে এখন সুগন্ধি আমেজ। এই সুবাস যেন জানিয়ে দেয়, আশপাশে তুলসীমালা ধান ফলেছে।
তুলসীমালা দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি চাল। তুলনামূলকভাবে চিকন ও কালো রঙের ধানটি দিয়ে পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, পায়েস ও পিঠা তৈরি করা হয়। স্বাদ ও গন্ধে অনন্য হওয়ায় বহু আগেই দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও এর কদর বেড়েছে। ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালে শেরপুর জেলা প্রশাসন একে ‘ব্র্যান্ডিং পণ্য’ ঘোষণা করে। এরপর ২০২৩ সালের ১২ জুন ধানটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়, যা দেশের ১৪তম জিআই পণ্য।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গন্ধ, স্বাদ ও গুণে অতুলনীয় এই তুলসীমালা ধান এখন শেরপুরের কৃষি ঐতিহ্যের অন্যতম গর্ব। বাতাসে ছড়িয়ে পড়া এর সুবাস পরিচিত করে তোলে ‘সুগন্ধি ধানের জেলা’ হিসেবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় মোট ৮ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে তুলসীমালা ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে শেরপুর সদরে ২ হাজার ২২৫ হেক্টর, নালিতাবাড়ীতে ৪ হাজার ১৪৭ হেক্টর, ঝিনাইগাতীতে ১ হাজার ২৩১ হেক্টর, নকলায় ৬৯১ হেক্টর ও শ্রীবরদীতে ৪২৫ হেক্টর। এখন এসব মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে।
কৃষকেরা বলেন, তুলনামূলকভাবে তুলসীমালার ফলনে কম খরচ হয়। একরপ্রতি ৩০ থেকে ৩২ মণ ধান পাওয়া যায়। বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম থাকে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
নালিতাবাড়ী উপজেলার খালভাঙা এলাকার সাড়ে তিন একর জমিতে তুলসীমালা ধান চাষ করেছেন কৃষিবিদ সাজ্জাত হোসেন। তিনি জানান, এবার ফলন ভালো হয়েছে। সরকার যদি আরও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, তাহলে তুলসীমালা ধানের আবাদ আরও বাড়ানো সম্ভব।
নিচপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তুলসীমালা ধান পরিপুষ্ট হতেই চারপাশে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। নিজেদের খাওয়ার জন্য প্রতিবছর এই ধান চাষ করি, বাকি ধান বিক্রি করি। এতে খরচের তুলনায় লাভ বেশি। তবে একরে ধানের পরিমাণ কম হওয়ায় অনেকেই এই ধান চাষ করতে চান না।’
জেলার মধ্যে নালিতাবাড়ীতে সবচেয়ে বেশি তুলসীমালা ধান উৎপাদিত হয় বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে এ চালের চাহিদা আছে। কৃষি কার্যালয়ের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রশিক্ষণ-পরামর্শ দেওয়া হয়।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, তুলসীমালা ধান মূলত রোপা আমন মৌসুমে উৎপাদিত হয়। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই ধানের আবাদ জেলায় বেড়েছে। জেলার উৎপাদিত তুলসীমালা চাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ও বিদেশে রপ্তানি করা হয়।