সুনামগঞ্জে কাঁঠাল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, গ্রেপ্তার ১৫

সুনামগঞ্জ জেলার মানচিত্র

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে মসজিদে কাঁঠাল নিলামকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার তিন দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আজ বুধবার আরও সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট ১৫ জনকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন দুই পক্ষের পুরুষ লোকেরা। পুলিশ মামলা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করলেও কোনো ব্যক্তি অভিযোগ নিয়ে থানায় যাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এখনো মামলা হয়নি। বলা যায়, পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু দুই পক্ষের লোকজনই পলাতক। আমরা চেষ্টা করছি। আসলে অভিযোগকারী পাওয়া যাচ্ছে না।’

হাসনাবাদ ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে দুই পক্ষ ও তাদের সমর্থক পরিবারগুলোর পুরুষ সদস্যরা গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন বাড়িতে শুধু নারী ও শিশুরা আছে। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের লাশ গতকাল মঙ্গলবার দাফন করেছেন আশপাশের গ্রামের লোকজন। নিহত চারজনের মধ্যে মোখলেছুর রহমান (৬২) গত সোমবার রাতে পলাতক অবস্থায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে মারা যান।

আরও পড়ুন

হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মকসুদ আলীর স্ত্রী রাজিয়া বেগম বলেন, তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে ঘটনার পর থেকে বাড়িছাড়া। তাঁরা কোথায় আছেন তিনি জানেন না। পাশের জামলাবাজ গ্রামের বাসিন্দা পারভেজ আহমদ বলেন, পুরো গ্রামটাই এখন নীরব। মনে হয়, কোনো মানুষ নেই। বাড়িঘর খালি। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার সকালে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে মালদর আলী ও দ্বীন ইসলাম পক্ষের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। আহত হন আরও ২০ জন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন হাসনাবাদ গ্রামের নজরুল ইমলাম (৪০), বাবুল মিয়া (৫০), শাহজাহান মিয়া (৫০) ও মোখলেছুর রহমান (৬২)। এর মধ্যে নজরুল ও বাবুল দ্বীন ইসলাম এবং শাহজাহান ও মোখলেছুর মালদর মিয়া পক্ষের লোক।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, হাসনাবাদ গ্রামের মসজিদে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর একজনের দান করা একটি কাঁঠাল নিলামে বিক্রি হয়। ২৫০ টাকা সর্বোচ্চ দরে এটি কেনেন মালদর আলী পক্ষের খসরু মিয়া। পর মুহূর্তেই দ্বীন ইসলাম পক্ষের আবদুল বাহার সবাইকে থামিয়ে দেন। তাঁর দাবি, নিলাম ডাক নিচু স্বরে বলায় তিনি শুনতে পারেননি। তিনি কাঁঠালটি আরও বেশি দাম দিয়ে কিনতে আগ্রহী। তাই আবার নিলাম ডাকের দাবি করেন তিনি। এ নিয়ে খসরু ও বাহারের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। মুরব্বিরা তাঁদের শান্ত করে বিদায় করে দেন। এরপর এ ঘটনায় দ্বীন ইসলাম ও মালদর মিয়ার পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কোনো ঝগড়ায় না জড়ানোর জন্য দুই পক্ষকেই অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। সোমবার সকালে উভয় পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যা সাতটায় শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালেদ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় মামলা করতে আসেননি।

আরও পড়ুন