সিলেটে ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে’ হাত-পা বেঁধে ছবি ছড়ানো হয় ফেসবুকে

সিলেট জেলার মানচিত্র

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক যুবকের হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা অবস্থার ছবি ছড়িয়ে পড়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর। ওই যুবককে ‘চোরাকারবারি সিন্ডিকেট টর্চার সেলে’ নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ জানাতে পারে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এভাবে হাত-পা বাঁধা ছবি ফেসবুকে দেওয়া হয়।

ওই যুবক সিলেটের জৈন্তাপুরের গুয়াবাড়ি এলাকার সালমান আহমদ (২১)। ওই গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮৫ নম্বর ঘরে থাকেন সালমান। ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর এক দিন আগে সালমানের বড় ভাই সেবুল আহমদ (২৩) তাঁকে ও তাঁর ভাইকে মারধর করার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।

অভিযোগে একই এলাকার পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেন সেবুল আহমেদ। পরে সেটি তদন্তের জন্য প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ। ফেসবুকে পরে ছবি ছড়িয়ে পড়লে সেটিও তদন্ত করতে থাকে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হাত-পা বাঁধা ছবি ছাড়ানো হয়।

পুলিশ ও অভিযোগকারীর দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে জৈন্তাপুরের গোয়াবাড়িতে বিজিবি সদস্যদের একটি টহল দল যায়। এর জের ধরে সালমানের সঙ্গে একই এলাকার আরও কয়েকজন যুবকের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সালমানকে উদ্ধার করতে গেলে সেবুলও আহত হন। হামলাকারী যুবকদের অভিযোগ ছিল, সালমান বিজিবি সদস্যদের খবর দিয়ে গ্রামে নিয়ে গেছেন। তবে সালমান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, হাত-পা বাঁধা ছবি ছড়ানোর ঘটনায় প্রথমে সালমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কথায় অসংলগ্নতা পাওয়া যায়। একপর্যায়ে ছবির ঘরের মেঝের সঙ্গে সালমানের ঘরের মেঝে মিলে যায়। ঘর তল্লাশি করে হাত-পা বাঁধার দড়িও পাওয়া যায়। এতে পুলিশ নিশ্চিত হয়, টর্চার সেলে নির্যাতনের অভিযোগ এনে ছাড়ানো ছবিটি সালমানের ঘরেই ধারণ করা হয়েছে। পরে বিষয়টি স্বীকার করেন সালমান। তবে তাঁকে কারা বেঁধে ছবি ধারণ করেছে, সেটি তিনি জানাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সালমান বিজিবির সোর্স হিসেবে এলাকায় পরিচিত। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁরাও বিজিবির সোর্স। তাঁদের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে এমনটি হয়েছে।

সালমানের ভাই সেবুল আহমদ দাবি করেন, ভাইয়ের হাত-পা বাঁধার ছবিটি যে সময় ধারণ করা হয়েছে, সে সময় তিনি অভিযোগ দেওয়ার জন্য থানায় ছিলেন। তাঁদের মা ঘরে ছিলেন না। ভাই ঘরে একা ছিলেন এবং দরজা খোলা ছিল। বিষয়গুলো সালিসের মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেছে। এ নিয়ে তিনি আর কথা বাড়াতে চান না বলে উল্লেখ করেন।

জৈন্তাপুর থানার ওসি বলেন, হামলার অভিযোগের সমঝোতার বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। হাত-পা বাঁধা ছবিটির বিষয়ে তদন্ত চলছে। ছবি কারা তুলেছে, কারা ছড়িয়েছে, তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।