বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দুই জেলায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) ও কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতার কর্মী-সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরা ও কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়। এতে দুই জেলার মহাসড়কেই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।
আজ সন্ধ্যায় শরীয়তপুর-১ আসনে বিএনপি মনোনীত সাঈদ আহমেদ আসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে এ কর্মসূচি করা হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করার পর তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আহমেদ শরীয়তপুর-৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত ডামুড্যা উপজেলার বাসিন্দা। এখানে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আমজাদ সওদাগর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমান। সাঈদ আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন সরদার নাছির উদ্দিনের সমর্থকেরা।
আজ নাছির উদ্দিনের সমর্থকেরা জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট এলাকায় শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তাঁরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানান। সড়ক অবরোধের কারণে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের অনুরোধে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে সরে যান।
জাজিরার বড় গোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাদশা সরদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর বাড়ি অন্য একটি নির্বাচনী এলাকায়। তিনি কখনো শরীয়তপুর-১ আসনের বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এ অঞ্চলের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদেরও চেনেন না। যাঁকে চেনেন না, তাঁকে কীভাবে ভোট দিতে যাবেন? এ জন্য তাঁরা প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানান।
পালেরচর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আবদুল জলিল মাদবর বলেন, অন্য এলাকা থেকে একজনকে ধরে এনে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মানতে পারছেন না। তাই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সম্মিলিতভাবে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। তাঁরা চান, দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা সরদার নাছির উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।
এ বিষয় কথা বলতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাঈদ আহমেদ ও মনোনয়নবঞ্চিত সরদার নাছির উদ্দিনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তাঁরা ধরেননি। জাজিরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম আকন প্রথম আলোকে বলেন, কিছু বহিরাগত লোক এনে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষেই আছেন।
এদিকে কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন মনোনয়ন বাতিল করে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। আজ বিকেল পৌনে চারটায় উপজেলার দেবপুর-রামপুর এলাকা অবরোধ করেন মিজানুরের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘ ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট অবরোধের কারণে অন্তত ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকালে মিজানুরের সমর্থকেরা ‘দুঃসময়ের মিজান ভাই, মনোনয়নে তাঁকে চাই’, ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানব না’, ‘৩ তারিখের মনোনয়ন মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। কর্মসূচিতে নারীরাও অংশগ্রহণ করেন।
৩ নভেম্বর কুমিল্লা-৫ আসনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়ন ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ হন মিজানুর রহমানের অনুসারীরা।
বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ উদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা-৫ আসনে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি যোগ্য প্রার্থী নন। এই আসনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে হলে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমানকে মনোনয়ন দিতে হবে। কারণ, জনগণের সমর্থন মিজানুর রহমানের পক্ষে। মিজানুর রহমানকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে। আমরা এই মনোনয়ন মানি না। অবিলম্বে মনোনয়ন পরিবর্তন করে মিজানুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’
ময়নামতি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘৩ নভেম্বর যে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেই মনোনয়ন আমরা মানি নাই, মানব না। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দাবি, এই আসনে মিজানুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। গত ১৭ বছর তিনি তৃণমূলের পাশে ছিলেন।’