হিজলায় আ.লীগ ও যুবলীগ নেতাকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় মামলা

হামলায় আহত আলাউদ্দিন বেপারীকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের হিজলা উপজেলার হিজলা-গোরাব্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন ব্যাপারীকে হাতুড়িপেটার ঘটনায় উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদারের ছেলে জিদান হাওলাদারসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে আলাউদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মো. সুজন ব্যাপারী বাদী হয়ে হিজলা থানায় মামলা করেন।

এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে হিজলা-গৌরাব্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলাউদ্দিন ব্যাপারী (৫০) ও তাঁর সঙ্গী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মো. মান্নান সিকদারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই দুই নেতাকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যোগ দিতে হিজলা সদরে যাচ্ছিলেন আলাউদ্দিন ও মান্নান সিকদার। তাঁরা বাদামতলী এলাকায় পৌঁছালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েতের ছেলে জিদান হাওলাদারের নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জন যুবক রড ও হাতুড়ি নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। তাঁদের দুজনকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ফেলে যান। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁদের উদ্ধার করে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহত আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বড়জালিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এনায়েতের ছেলে জিদান ও ভাগনে মারুফের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। তাঁরা বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।

তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে জিদান হাওলাদার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আলাউদ্দিন ব্যাপারী সম্প্রতি তাঁদের এক লোককে মারধর করায় থানায় মামলা হয়েছে। এ জন্য পাল্টা মামলা দিয়ে তাঁদের জব্দ করতে নিজেরা হামলার নাটক সাজিয়েছেন।

ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর মাছের ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েতের সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের দ্বন্দ্ব ছিল। আগে ঘাটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল নজরুলের কাছে। কিন্তু গত বছর সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর একটি ঘাট নিয়ে মাছের ব্যবসা শুরু করেন এনায়েত। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। নজরুলের মাছের ঘাটের দেখাশোনা করতেন আলাউদ্দিন ব্যাপারী। ওই দ্বন্দ্বের জেরে তাঁর ওপর হামলা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, এনায়েত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে ছেলে, ভাগনে ও স্বজনদের মাধ্যমে মাছের ঘাট, জমিজমাসহ দখলদারিতে মেতে ওঠেন। এর অংশ হিসেবে হিজলা-গৌরাব্দি ইউনিয়নে তাঁরা মাছের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু গরিব জেলেদের মাছ কিনে টাকা না দেওয়ায় ঝামেলা শুরু হয়। এ নিয়ে সালিস বৈঠকও হয়েছে।

নজরুল আরও বলেন, ‘মূলত আমার ওপর হামলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। আমি ওই পথ দিয়ে হিজলায় না যাওয়ায় তাঁরা আলাউদ্দিন ও মান্নানের ওপর হামলা করেন।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এনায়েত হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, নজরুল ইসলাম নিজেকে মেঘনা নদীর ‘গডফাদার’ মনে করেন। নদী রাষ্ট্রের, সেখানে যে কেউ ব্যবসা করতে পারেন। চাঁদাবাজি ও দখলদারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করি। আমার বিরুদ্ধে কেউ কখনো চাঁদাবাজি ও দখল বা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেনি। রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইউনুস মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন ও যুবলীগ নেতা আবদুল মান্নানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মাছের ঘাট নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হামলা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।