ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টানা দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৪ কিলোমিটার অংশে টানা দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট চলছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় গত বুধবার রাত আটটার পর থেকে এ যানজট চলছে। মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর, শান্তিনগর বেড়তলা এবং আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও খড়িয়ালা এলাকায় বড় বড় আকারের গর্ত এ যানজটের প্রধান কারণ।
সড়ক ও জনপথ; জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। সাত থেকে আট বছর ধরে ধীরগতিতে কাজটি চলছে। নানা কারণে একাধিকবার কাজ বন্ধও হয়েছে। মহাসড়কের এক পাশের কাজ প্রায় শেষ হলেও ধীরগতির কারণে অনেক স্থানেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার সরেজমিন দেখা গেছে, বিশ্বরোড় মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে চলতে হচ্ছে এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার গতিতে। এসব গর্ত অতিক্রম করতে পণ্যবাহী যানবাহনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর এসব গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। আবার গোলচত্বরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে পানি নিষ্কাশনের নালা নির্মাণের জন্য গর্ত করে রাখা হয়েছে। এতে গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গোলচত্বর অতিক্রম করার জন্য যানবাহনকে থেমে যেতে হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার রাত আটটার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর ও আশুগঞ্জের খড়িয়ালা থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বাড়িউরা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট ছিল। এরপর যানজট ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আজ সকাল ১০টার পর যানজট আরও বেড়ে যায়।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, বিশ্বরোড মোড় ও কুট্টাপাড়া মোড় ও শাহবাজপুর হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটেছে।
গত দুই দিনে কয়েকবার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেলেও আজ তা বেড়ে যায়। জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো যাত্রীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হবিগঞ্জ থেকে বগুড়াগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক মনির হোসেন আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাধবপুর থেকে এখানে (আশুগঞ্জের বগইর) আসতে আট ঘণ্টা সময় লাগছে। তেল শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাকি পথ কীভাবে যামু, তা জানি না।’ মৌলভীবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের চালক মনির মিয়া বলেন, ‘আমরা অসহায় হইয়া পড়ছি।’
মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ, সরাইল, আশুগঞ্জ থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাঠে থাকতে দেখা গেছে। সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মামুন রহমান জানান, একদিকে টানা বৃষ্টির পর আজ থেকে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, অন্যদিকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর পর্যন্ত অনেক স্থানে যে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত ভরাট না করা পর্যন্ত যানজটের শেষ হবে না। যানবাহনগুলোকে এখানে এসে প্রথমে থেমে যেতে হচ্ছে, এরপর এক থেকে পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলতে হচ্ছে। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে মহাসড়কেই আছি। গর্ত ভরাট না করলে আমাদেরকে সড়কেই থাকতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটি পড়েছে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) প্রকল্পের আওতায়। আমরা এ প্রকল্পের মাধ্যমে আপাতত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। দ্রুতই সংস্কার করা হবে।’