‘সে গেল কোথায়’, প্রশ্ন আবরার হত্যায় দণ্ডিত মুনতাসিরের বাবার
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি কারাগার থেকে পালিয়েছেন, টেলিভিশনের খবর দেখে জানতে পেরেছেন বলে দাবি তাঁর বাবা মো. আবদুল মজিদের। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর দুই দফা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মুনতাসিরের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ কিছু বলেনি। এখন পালানোর খবর পেলেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘সে গেল কোথায়?’
মুনতাসিরের বাবা ময়মনসিংহ সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি অবসরে যান। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কালিয়ান গ্রামে হলেও সেখানে কেউ থাকেন না। ময়মনসিংহ নগরের বাউন্ডারী রোডের একটি বাসায় পরিবারের সদস্যরা থাকেন। মুনতাসিরের বোন চিকিৎসক।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মুনতাসিরের বাবা আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই মাস পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে মুঠোফোনে তিন-চার মিনিট কথা বলার সুযোগ দিত কারা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ৭ জুলাই ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সেদিন শুধু ভালো–মন্দ কুশল বিনিময় হয়েছিল। আমরা কেমন আছি, খেয়েছি কি না, এর বাইরে আর কোনো কথা হয়নি। এরপর এখন পর্যন্ত আর যোগাযোগ নেই। গতকাল রাতে টেলিভিশনে খবর দেখে জানতে পারি সে (জেমি) কারাগার থেকে পালিয়েছে।’
আবদুল মজিদ বলতে থাকেন, ‘আগস্ট থেকে আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। একবার শুনতে পাই, হাসপাতালে লাশ আছে। তখন হাসপাতালে গিয়ে লাশ পাইনি। কারাগারে গিয়েও খোঁজ করার চেষ্টা করি। কিন্তু অনুমতি না থাকায় দেখার সুযোগ পাওয়া যায়নি। দুবার কারাগারে গিয়ে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম। তখন আমাদের জানানো হয়, তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) চাপে আছে, তাই দেখা করা যাবে না।’
কারাগার থেকে পালিয়ে মুনতাসির আল জেমি কোথায় যেতে পারে—জানতে চাইলে আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমরা তো জানতাম সে কারাগারে আছে। কিন্তু সে কোথায় গেল? আমরা তো কিছুই জানি না। আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। যেহেতু আমরা কিছু জানি না, আল্লাহর কাছে ছাড়া আর কারও কাছে আবেদন করার সুযোগ নেই।’
ছেলের মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর আপিল করেছিলেন জানিয়ে আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আপিল শুনানির আগেই আমাদের উকিল মারা গেছেন। তাই আর আপিলের শুনানি হয়নি। ২০১৯ সালে ছেলে যখন ধরা পড়েছে, তখনই আমরা ধরে নিয়েছি ছেলে মারা গেছে। ছেলে কারাগারে ছিল। কারাগার থেকে সে কীভাবে গেল, এত দিন কেন বের করল না? পুলিশ যদি খুঁজে বের করতে পারে, তাহলে আইনে যা হওয়ার হবে। আমার কিছু বলার নেই। আমাদের কাছে সে তো মারা গেছে আগেই।’
মুনতাসির আল জেমি বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সদস্য। মুনতাসির আল জেমি এই হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিয়ে কারাগারে ছিলেন।