ধান-মাছ বাঁচাতে বাঁধ কাটলেন বিক্ষুব্ধ জনতা

শত শত নারী-পুরুষ এক হয়ে বলেশ্বর নদ এবং বিষখালী নদীর সংযোগস্থল কচুয়া উপজেলা অংশে দেওয়া বাঁধ কাটতে শুরু করেন। বুধবার বিকেলে বাগেরহাটের কচুয়ায়
ছবি: প্রথম আলো

নদী খননের জন্য দেওয়া বাঁধের কারণে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে পানিসংকট। এতে বাগেরহাটের দুই উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামে দেখা দেয় হাহাকার। বিষখালী নদীতে দেওয়া ওই বাঁধের কারণে চার-পাঁচ মাস ধরে জেলার কচুয়া উপজেলার বাঁধাল, রাড়িপাড়া, গোপালপুর এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে শুকিয়ে গেছে ওই সব এলাকার খাল ও পুকুর। এতে পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মাছের খামারি, ধানচাষিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

পানিসংকট নিরসনে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো লাভ না হওয়ায় এবার সেই বাঁধ কেটে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ বুধবার কচুয়ার বাঁধাল, গোপালপুর; মোরেলগঞ্জের বনগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এক হয়ে বলেশ্বর নদ এবং বিষখালী নদীর সংযোগস্থল কচুয়া উপজেলা অংশে দেওয়া বাঁধ কাটতে শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় বাঁধাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নকিব ফয়সাল অহিদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কোতয়াল ইলিয়াস আলী, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অংশ নেন বাঁধ কাটায়। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাঁধ কেটে খালে পানি প্রবেশ করান তাঁরা।

পানির জন্য পুরো এলাকায় হাহাকার লেগে গিয়েছিল। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ মিলে দুই হাজার মানুষ এসেছেন। যে যেভাবে পেরেছেন বাঁধ কেটেছেন। কয়েকটা বাঁধ দেওয়া ছিল, কাটা হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাবে।
কোতয়াল ইলিয়াস আলী, সভাপতি, বাঁধাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ

পাউবো সূত্র জানায়, জেলার মোরেলগঞ্জ ও কচুয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মৃতপ্রায় বিষখালী নদীর ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার খননের উদ্যোগ নেয় পাউবো। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয় খননকাজ। নির্বিঘ্নে খননকাজ সম্পন্ন করতে তখন থেকেই বিষখালী নদীর বাঁধাল, পূর্ব বিষখালীসহ কয়েকটি জায়গায় একাধিক বাঁধ দেওয়া হয়। যার ফলে ৪০টির মতো গ্রাম পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় বিকেল পৌনে চারটার দিকে খননের জন্য বিষখালী নদীতে দেওয়া বাঁধ কেটে খালে পানি প্রবেশ করান বিক্ষুব্ধ জনতা
ছবি: প্রথম আলো

খন্তা হাতে বাঁধের মাটি কাটতে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা সুজন শেখ বলেন, ‘দেড়-দুই মাস ধরে শুধু বাঁধ কেটে পানি ঢোকানোর আশ্বাস দেয় ঠিকাদারের লোকজন। কিন্তু বাঁধও কাটে না, পানিও ঢোকায় না। আবার কাজ শেষ হওয়ারও লক্ষণ নেই। আমরা একধরনের বাধ্য হয়ে সবাই মিলে বাঁধ কাটতে আসছি।’

পুরুষদের সঙ্গে বাঁধ কাটতে এসেছিলেন গোপালপুর এলাকার নারী রুকাইয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘ধানে কাঁচা থোড় আসছে, এখন যদি পানি না দিতে পারি, তাইলে তো ধান হবে না। বাড়িতে রান্না ও গোসলের পানিও পর্যাপ্ত নেই। বাধ্য হয়ে সবাই মিলে বাঁধ কাটতে আসছি।’

রসুল শেখ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রায় তিন মাস ধরে পানির কষ্টে ভুগছিলাম। এখন পানি ঢুকতেছে। আশা করি, আল্লাহ আমাদের ওপর রহমত করবেন। ধান ও মাছ ভালো হবে।’

বাঁধাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কোতয়াল ইলিয়াস আলী বলেন, পানির জন্য পুরো এলাকায় হাহাকার লেগে গিয়েছিল। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ মিলে দুই হাজার মানুষ এসেছেন। যে যেভাবে পেরেছেন বাঁধ কেটেছেন। কয়েকটা বাঁধ দেওয়া ছিল, কাটা হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাবে।

এদিকে হঠাৎ বাঁধ কেটে দেওয়ায় খননকাজে কিছুটা সমস্যা হবে দাবি করে বাগেরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল-বিরুনী বলেন, ‘বাঁধ কাটার বিষয়টি জানতাম না। পরে জেনেছি। হঠাৎ বাঁধটি কাটায় খননকাজে সমস্যা হবে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা দুরূহ হতে পারে।’