নেত্রকোনায় সড়কের সংস্কারকাজে ধীরগতি, চরম দুর্ভোগে মানুষ
নেত্রকোনার কলমাকান্দা সদরের চানপুর মোড় থেকে খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারকাজ ধীরগতিতে চলছে। সড়কের বিভিন্ন অংশ খোঁড়াখুঁড়ি করে তিন সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে যানবাহনের চালকসহ সড়কে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ঠিকাদারের সীমাহীন গাফিলতির কারণে এমনটি হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করলেও কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলডিইডি) নেত্রকোনা কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দার চানপুর মোড় থেকে গোবিন্দপুর বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার। ওই সড়ক দিয়ে উপজেলার খারনৈ, লেংগুরা, রংছাতি ও কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের উত্তর অংশের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন শতাধিক পর্যটকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। কিন্তু সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। খানাখন্দ ছাড়াও কোথাও পিচঢালাই আছে, কোথাও নেই। বৃষ্টিতে পানি-কাদায় একাকার সড়কটি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ময়মনসিংহ অঞ্চল পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। ওই প্রকল্পে আওতায় সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। গত জানুয়ারিতে মদনের মেসার্স সারওয়ার জাহান নামের একটি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চানপুর থেকে এতিমখানা পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার আরসিসি ঢালাই আর বাকি অংশ পিচের কাজ করার কথা। কাজের মেয়াদকাল ধরা হয় প্রায় এক বছর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত দুই মাস আগে সংস্কারকাজ শুরু করে। চানপুর মোড় থেকে মাদ্রাসা বাজার পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার রাস্তা খোঁড়া হয়। এ ছাড়া সড়কের দুই পাশে প্রায় ৫০ মিটার গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে সড়কে চলাচলকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সংস্কারকাজের শুরুতে ঠিকাদার গাইডওয়ালে পুরোনো ইটসহ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে। পরে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানালে তিনি পুরোনো ও নিম্নমানের ইট ব্যবহার বন্ধ করে ভালোমানের ইট লাগানোর নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার সকালে দেখা গেছে, চানপুর মোড় থেকে সড়কের দুই পাশে গাইডওয়াল নির্মাণ করা স্থানের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় আর সড়কটি খোঁড়ে রাখায় পানিতে ভরে আছে। ঝুঁকি নিয়ে একটি রিকশা ও মোটরসাইকেল চলছে। একটি ইজিবাইক উল্টে গেছে। দুই পাশের গাইডওয়ালের ওপর দিয়ে পথচারীরা হেঁটে চলাচল করেছেন। এ সময় কাদা ছিটকে পাশে হেঁটে যাওয়া একজন স্কুলশিক্ষার্থীর পোশাক নষ্ট হয়।
ইজিবাইকচালক আরিফ মিয়া বলেন, ‘আমি এই রাস্তা দিয়া আগে প্রত্যেক দিন প্রায় ১০ বার যাওয়া-আসা করতাম। অহন একবারও যাইতে মন চায় না। রাস্তাটি খোঁড়া রাহনের পর ভোগান্তি আরও বাড়ছে কয়েক গুণ।’
ঠিকাদার সারওয়ার জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে উপজেলা প্রকৌশলী শুভ্রদেব চক্রবর্তী বলেন, ‘ঠিকাদার এই রাস্তা নিয়ে আমাদের খুবই ভোগাচ্ছেন। পুরোনো নিম্নমানের ইট ব্যবহারের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিকাদারের গাফিলতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে নেত্রকোনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম শেখ ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই করে প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের জন্য কাজ কিছুদিন বন্ধ রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে আবার শুরু করা হবে।