বখাটের হাতে প্রাণ হারানো মুক্তির শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করলেন বাবা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার নিজ বাড়িতে মেয়ের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেন নিখিল বর্মণ
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার বারহাট্টায় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটের হাতে খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মুক্তি বর্মণের (১৫) শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার মেয়ের শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেন মুক্তির বাবা নিখিল বর্মণ।

দুপুরে উপজেলার প্রেমনগর ছালিপুরা গ্রামের বাড়িতে গেলে কথা হয় মুক্তির মামা শ্রীকান্ত বর্মণের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকাল নয়টা থেকে শ্রাদ্ধ শুরু হয়েছে। নেত্রকোনা সদরের ঠাকুরাকোনা এলাকা থেকে অপু চক্রবর্তী নামের একজন পুরোহিতের মাধ্যমে শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হচ্ছে।

আরও পড়ুন

নিহত মুক্তি বর্মণ প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত। সে উদীচী বারহাট্টা শাখা কমিটির সাধারণ সদস্য, নারী প্রগতির ইয়ুথ গ্রুপ ও কংস থিয়েটারের সদস্য ছিল। এ ঘটনায় মুক্তির বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার মো. কাওছার মিয়া একই গ্রামের মো. শামসু মিয়ার ছেলে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাওছার মিয়া দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। গত মঙ্গলবার বিদ্যালয় থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মুক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি।

পরদিন বুধবার ডিবি পুলিশ গ্রামের একটি জঙ্গল থেকে তাঁকে আটক করে। এ ঘটনায় মুক্তির বাবার করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কাওছার।

শ্রাদ্ধের সময় মুক্তি বর্মণের ছবিতে ফুলের মালা পরানো হয়
ছবি: প্রথম আলো

শুক্রবার বিকেলে বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোকন কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদের দিকনির্দেশনায় আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে মামলাটি তদন্ত করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া সম্ভব হবে।’

শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এ সময় মুক্তির বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিশেষ করে মুক্তির মায়ের আহাজারিতে অন্যদের চোখও আর্দ্র হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানে মুক্তির স্বজন, প্রতিবেশী, থানা-পুলিশ, সহপাঠী ও শিক্ষকেরা অংশ নেন।

আরও পড়ুন

মুক্তির বাবা নিখিল বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা হইয়া মেয়ের শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান আমারেই করতে হইছে—এই কষ্ট অসহ্য। মানতে পারতাছি না। আমার মেয়েডার আত্মা যেন শান্তি পায়, আপনারা আশীর্বাদ করবেন। আর যে ছেলেডা আমার এই নিষ্পাপ মেয়েডারে হত্যা করছে, তার যেন বিচার হয়। আর কোনো বাবা-মার বুক যেন খালি না হয়।’

বিলাপ করতে করতে মুক্তির মা প্রণবা রানী বর্মণ বলেন, ‘আমার সব ফুরাইয়া গেছে। এভাবে মুক্তির জীবন দিতে হইব কোনো সময় ভাবছিলাম না।’