মুন্সিগঞ্জে বসতঘর থেকে চুরি হওয়া শিশুর হদিস পাওয়া যায়নি

প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌর এলাকার একটি বসতঘর থেকে দুই মাস বয়সী শিশু চুরি হওয়ার এক দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোনো হদিস মেলেনি। হয়নি কোনো মামলা। পরিবার ও আত্মীয়স্বজন শিশুটিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, শিশুটি চুরির সঙ্গে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের কেউ জড়িত থাকতে পারেন।

শিশুটির নাম আজান। সে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকার মো. শরীফ হোসেনের ছেলে। আজান জন্মের কয়েক দিন আগে থেকে শরীফের স্ত্রী শ্রাবণী বেগম মিরকাদিমের গোপালনগর এলাকার বাবার বাড়িতে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে সেখান থেকে শিশুটি চুরি হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মামা মুক্তার হোসেন বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে শ্রাবণী আক্তার ছেলে আজানকে বসতঘরের খাটে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে শৌচাগারে যান। এ সময় বাড়ির অন্যরাও ঘুমিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর শ্রাবণী ঘরে এসে দেখেন, তাঁর ছেলে নেই।

আজ শুক্রবার সকালে গোপালনগরের শিশু আজানের নানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাতি হারানোর শোকে রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বিলাপ করে কাঁদছেন নানা মোহন মিয়া (৬০)। একটি খুপরির মধ্যে নাতির স্মৃতি স্মরণ করে কান্নাকাটি করছিলেন নানি ময়না বেগম (৪৫)। আশপাশের লোকজন এসে তাঁদের বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাড়িতে মা শ্রাবণী আক্তারকে পাওয়া যায়নি। সন্তানের খোঁজে বের হয়েছেন তিনি। মুঠোফোন কথা হলে শ্রাবণী বলেন, ‘আমার বাবা বাচ্চার পাশে ঘুমিয়ে ছিল। সকাল পৌনে সাতটার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যাই। সে সময় পাশের বাড়ির চাচি রমিজা বেগম ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে বাচ্চার দিকে খেয়াল রাখতে বলে শৌচাগারে যাই। এসে দেখি, ওই চাচিও নেই, বাচ্চাও নেই। পরে খোঁজ নিয়ে দেখি, চাচি তাঁদের ঘরে, বাচ্চা কোথাও নেই। আমার বাবাটা বুকের দুধ খায়, দুই দিন হয়ে যাচ্ছে, ওরে খুঁজে পাচ্ছি না।’

যে ঘর থেকে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে, তার প্রায় ১০০ ফুট পশ্চিমে রমিজা বেগমদের ঘর। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রমিজা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রমিজা বেগম বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় অসুস্থ ছিলেন। সারা রাত হাসপাতালে ছিলাম। সকালে যখন ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন নাকি শ্রাবণী তার বাচ্চার দিকে আমাকে খেয়াল রাখতে বলেছিল। তবে আমি শুনিনি। আমি ঘরের দিকে চলে গিয়ে ছিলাম।’

যে ঘর থেকে শিশুটি হারানো গেছে, তার আশপাশে ঘিঞ্জি ঘর। অনেকগুলো ঘর। বাড়ির আশপাশের অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, শ্রাবণীদের ঘরে যেতে হয় অন্য বাড়ির সামনে দিয়ে। এ ঘরে যে বাচ্চা আছে, তা দূরের মানুষ জানার কথা নয়। শিশুটির মা কোন সময় বাইরে যাবেন, এটাও কারও পক্ষে জানার কথা নয়। এ শিশু চুরি হওয়ার পেছনে নিকটাত্মীয় জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয় ব্যক্তিদের।

আজানের বাবা শরীফ হোসেন বলেন, তিনি একজন ট্রাকচালক। তাঁকে বাড়ির বাইরেই বেশি সময় থাকতে হয়। দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন শ্রাবণীকে। সন্তান জন্মের কয়েক দিন আগে গোপালনগরে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। এখানেই আজানের জন্ম হয়। বৃহস্পতিবার সকালে গাড়ি চালাতে বের হচ্ছিলেন। পরে শুনতে পান, তাঁর ছেলেকে কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে। শরীফ হোসেন বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কে নিয়ে গেল, জানি না।’

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো বাচ্চা চুরির ঘটনায় মামলা হয়নি। তবে বাচ্চার মা ঘর থেকে বের হওয়ার চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বাচ্চাটি কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। বাচ্চাটি মুন্সিগঞ্জের বাইরে যেতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চা নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে বাচ্চার বাবা-মায়ের পরিবার, আত্মীয়স্বজন কেউ জড়িত থাকতে পারেন।