চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ভারী বৃষ্টি, হাতিয়ায় নৌ যোগাযোগ বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দেশের আট উপকূলীয় জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ। নোঙর করে রাখা হয়েছে মাছ ধরার নৌযান ও লাইটারেজ জাহাজগুলোকে। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গার আকমল আলী ঘাটে
ছবি জুয়েল শীল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’য় রূপ নিয়ে বাংলাদেশের উপকূলের উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম নগরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।

আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই বৃষ্টি হয়েছে, যাকে ভারী বৃষ্টি বলা যায়।

এদিকে ‘মিধিলি’র কারণে সাগর উত্তাল থাকায় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাতিয়ায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে দেশের আট উপকূলীয় জেলায় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া বিভাগ। নোঙর করে রাখা হয়েছে মাছ ধরার নৌযান ও লাইটারেজ জাহাজগুলোকে। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গার আকমল আলী ঘাটে
ছবি জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকায় পানি

বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকাগুলোয় গোড়ালিসমান পানি উঠেছে। আজ সকালে নগরের বাদুরতলা এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বাদুরতলা থেকে কাপাসগোলা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় গোড়ালি থেকে গোড়ালির কিছুটা ওপরে পর্যন্ত পানি উঠেছে। সড়কের কিছুটা নিচু স্থানে পানি হাঁটু ছুঁয়েছে।

বাদুরতলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘দোকানের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি পুরো রাস্তায় পানি। উপায় না পেয়ে পানি মাড়িয়েই যেতে হচ্ছে।’
নগরের বহদ্দারহাট, বাড়ইপাড়া, খড়মপাড়া, খাজা রোড, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল, চকবাজার, ঘাসিয়াপাড়া, ডিসি রোড, খতিবের হাটসহ বিভিন্ন নিচু এলাকায় গোড়ালিসমান পানি উঠেছে।

খড়মপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ফারহান বলেন, এলাকায় নালা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় নালাগুলো বন্ধ, তাই পানি সরেনি, রাস্তায় জমে আছে। চলাচলে যা বাড়তি ভোগান্তি তৈরি করেছে।

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় নগরের সাগরিকা এলাকায়
ছবি জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মাইকিং

ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকেরা মাইকিং করে লোকজনকে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, নগরের ১১৬টি ও উপজেলায় ৪৯৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, টাকা, কম্বল, শিশুখাদ্য মজুত আছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব সামগ্রী দ্রুত বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এর আগে গতকাল রাতে জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি বিষয়ে জুম অ্যাপে জরুরি বৈঠক করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা আছে। পাশাপাশি শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশনা দেন তিনি।

ভারী বৃষ্টিতে ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকা। আজ শুক্রবার সকালে নগরের বাদুরতলা এলাকায়
ছবি- ফাহিম আল সামাদ

নোয়াখালীতে বৃষ্টি, বিচ্ছিন্ন হাতিয়া

নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গতকাল রাত থেকে নোয়াখালী জেলা শহরসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার আজ সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে। এর আগে গতকাল ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারির পর হাতিয়ার সঙ্গে সব ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকবে।

ইউএনও সুরাইয়া আক্তার আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হাতিয়ায় গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সকাল থেকে হালকা বাতাস বইছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা সম্ভব হয়নি। তবে কমিটির সদস্য ও সংস্থার সবাইকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হাতিয়ার চেয়ারম্যানঘাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় গতকাল থেকে চেয়ারম্যানঘাট থেকে হাতিয়ার নলচিরা, তমরুদ্দিসহ কোনো ঘাটের দিকে যাত্রীবাহী স্পিডবোট ছেড়ে যায়নি। একই কারণে আজ সকাল থেকে যাত্রীবাহী ট্রলারগুলোর চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে অনেকে জরুরি প্রয়োজনে হাতিয়া যেতে কিংবা হাতিয়া থেকে জেলা শহরে আসতে পারছেন না।

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দারের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আজ সকালে নগরের আকবরশাহ ও বিজয়নগর এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চেয়ারম্যানঘাটে আটকে পড়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী হোসাইন আহমেদ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সকালে তিনিসহ আরও কয়েকজন নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার জন্য ঘাটে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন নদী উত্তাল থাকায় প্রশাসনের নির্দেশে ট্রলার, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে আবার জেলা শহরে ফিরে আসেন।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় গতকাল রাত ৯টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শেষে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।