জরাজীর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে চলে শিক্ষা কার্যক্রম

১৪২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ২৬০।

কলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি কক্ষগুলোর দরজা-জানালা নেই। গত সোমবার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামেছবি: প্রথম আলো

কলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ইটের গাঁথুনির ওপরে টিনশেড। অপর কক্ষটি টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি। কক্ষগুলোর দরজা-জানালা নেই। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বিদ্যালয়টি খুলনার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামে অবস্থিত।

উপজেলার লোকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন কক্ষের ভবনটিরও দেয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে গেছে। সে ইটও ক্ষয়ে যাচ্ছে। পিলার ও দেয়ালের একাধিক স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। বর্ষায় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ভবনটি উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষকেরা এ ভবনেই পাঠদান করতে বাধ্য হচ্ছেন।

শুধু এই দুটি বিদ্যালয় নয়, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলার অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর সম্প্রতি কয়রার ১৪২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ২৬০।

* অনেক বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। * বর্ষাকালে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সংস্কারের অভাবে এসব বিদ্যালয় ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে গেছে। দরজা-জানালা খুলে পড়ে গেছে অনেক আগেই। কোথাও কোথাও ছাদের বিমেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। বর্ষাকালে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে ভবন ধসে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এরপরও পাঠদান কার্যক্রম চলছে এসব বিদ্যালয়ে। ১০টি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী টিনের শেড তৈরি করে পাঠদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে বেঞ্চ ও অন্যান্য উপকরণের অভাব রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদিনাবাদ মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লোকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাঙ্গেরখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাক্তারাবাদ বনরাণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্বচৌকুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট আংটিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমারখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভাগবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অস্থায়ী টিনশেডে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের কয়েকটিতে।

লোকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে কক্ষ দরকার সাতটি। কিন্তু আছে মাত্র চারটি। উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না। প্রতিবছর শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।

কলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন জানান, কক্ষের সংকটে দুই শিফটে ক্লাস হয়। এতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে। অফিসকক্ষ না থাকায় স্কুলের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ রাখতে সমস্যা হয়। পাকা ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসকে একাধিকবার জানানো হলেও কাজ হয়নি।

উত্তরচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, ১৯৯৮ সালে নির্মিত চার কক্ষের আধা পাকা ভবনটি ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিকল্প উপায় না থাকায় সেখানেই ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকমে পাঠদান চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করতে তাদের ভয় লাগে। পরীক্ষার সময় তাদের কষ্ট হয়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পরিবেশের সঙ্গে পাঠদান কার্যক্রমের একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। ঝুঁকির মধ্যে পাঠদানে মন বসবে না। নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা জরুরি। কয়রার পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বিকল্প উপায়ে পাঠদানের জন্য কিছু কিছু বিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করা হয়েছে।