নালিতাবাড়ীতে সুদমুক্ত ঋণের কথা বলে দরিদ্র নারীদের ৪ লাখ টাকা নিয়ে এনজিও উধাও

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে সুদমুক্ত ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দরিদ্র নারীদের কাছ থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছে ‘সুশীলন সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিকার চেয়ে নালিতাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগী নারী মণি আক্তার বলেন, ঋণ দেওয়ার কথা বলে তাঁর মতো ৪৫ জন নারীর কাছ থেকে সুশীলন সংস্থা নামে একটি এনজিওর কর্মকর্তারা সঞ্চয় নিয়েছেন। ঋণ দেওয়ার আগের দিন অফিস ছেড়ে সবাই চলে গেছেন। ভুক্তভোগী নারীরা সবাই গরিব। তাঁরা ঋণের আশায় সঞ্চয় দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতারিত হয়েছেন। তাঁরা এর বিচার চান।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের গড়কান্দা এলাকায় সুশীলন সংস্থা ঘর ভাড়া নেয়। এনজিওটির ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে কাবুল খান, দুজন মাঠকর্মী মো. ইমরান হোসেন ও মো. নাসির মিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দরিদ্র-অসহায় নারীদের হস্তশিল্পের কাজ শিখিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হবে বলে প্রচার চালান। সেই লক্ষ্যে গোজাকুড়া, মরিচপুরান, বেনিরগুপ, গারোভিটা, গেরাপাচা, শেকেরকুড়া, ডাওয়াকুড়া, শমশ্চুড়া ও আন্ধারুপাড়া গ্রামের নারীদের অংশগ্রহণে নয়টি দল গঠন করা হয়। দলের প্রতি সদস্যের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। ৫ হাজার টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকার সুদমুক্ত ঋণ এবং ১০ হাজার টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে ১ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রতি দলে পাঁচজন করে নারী সদস্য। ৯টি দলের ৪৫ জন নারীর কাছ থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সুশীলন সংস্থার মাধ্যমে ৪৫ জন নারীকে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই সাইনবোর্ড সরিয়ে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে উধাও হন কথিত প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারী। এখন তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী নারীদের পক্ষে দক্ষিণ আন্ধারুপাড়া গ্রামের দলনেতা মণি আক্তার প্রতিষ্ঠানটির তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগী নারী হুনুফা বেগম বলেন, প্রথমে ২৫০ টাকা করে নিয়ে সদস্য করেছে। পরে ঋণ দেওয়ার নামে কারও কাছ থেকে ৫ হাজার এবং কারও কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। সুদমুক্ত সহজ শর্তে ঋণের আশায় তাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন। এখন দেখেন, সবাই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপক কাবুল খান ও তাঁর দুই সহকারীর মুঠোফোনে কয়েক দফায় ফোন করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে কোনো এনজিওর ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত করতে হলে সমবায় অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয়। সুশীলন সংস্থা নামের কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনুমোদন নেয়নি। এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ভুক্তভোগী নারীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বিষয়টি তদন্ত করছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এলাকার নন। তাঁদের নাম-ঠিকানা শনাক্ত করতে কাজ চলছে।