চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন কলেজ ছাত্র তানভীর আহমেদ (১৯)। তাঁর মাথায় গুলি লাগে। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাঁর বয়স ২২ বছর। তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বহদ্দারহাটে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন এই দুই তরুণ। অজ্ঞাতপরিচয় তরুণের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরেকজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও সাতজন। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম নিয়ে হাসপাতালে আসেন আরও ১০ জন।
গুলিবিদ্ধ সাতজন হলেন নগরের এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী মো. শুভ (২২), বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সাইদ (২৪), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের আসাদ বিন ইসকার (২২), স্কুলছাত্র রাকিব শাহরিয়ার, আন্দোলনকারী মো. ইসমাইল (৩১), পথচারী মো. ইলিয়াস (২০) ও বোরহান উদ্দিন (২৫)।
আহত ব্যক্তিরা হলেন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের মিনহাজুর রহমান, মো. মামুন, মো. আদনান, রুপম মজুমদার, মো. অমি, পথচারী হোসেন সোহরাওয়ার্দী, সিটি কলেজের ছাত্র আরেফিন শুভ, রিকশাচালক মোরশেদ, পথচারী হিমাদ্রী ও মো. মাহিন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, নগরের বহদ্দারহাট, শাহ আমানত সেতু ও জিইসি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ শুরু হয় আজ বেলা দেড়টার দিকে। এর পর থেকে আরাকান সড়কসহ নগরের চান্দগাঁও অংশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টা থেকে শিক্ষার্থীরা বহদ্দারহাট মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাঁরা কোটা সংস্কার করা ও আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এক ঘণ্টার মধ্যেই হাজারখানেক শিক্ষার্থী জমায়েত হন সেখানে।
বেলা দেড়টার দিকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একটি মিছিল বহদ্দারহাট মোড়ের দিকে আসে। মিছিল থেকে শিক্ষার্থীদের জমায়েতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সরে পড়ে। এরপর পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা আবার জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকায়ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের ওপর ব্যাপক হারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।