সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রবীণ ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালছবি: সংগৃহীত

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রবীণ এক ব্যক্তিকে কিলঘুষি মেরে আহত করার অভিযোগ উঠেছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি আজ বুধবার হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী অমর চাঁদ দাস (৭৯) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হাসপাতালের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৩ মার্চ হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসার অংশ হিসেবে ১৬ মার্চ তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়।

অমর চাঁদ দাস গতকাল মঙ্গলবার রাতে অনলাইনে ও আজ ডাকযোগে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, প্রস্রাবজনিত সমস্যায় তাঁর ক্যাথেডার লাগানো হলেও ১৭ মার্চ থেকে তিনি প্রস্রাব-সংক্রান্ত জটিলতায় কষ্ট পেতে থাকেন। এ অবস্থায় তিনি অসংখ্যবার কর্তব্যরত শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তা চান।

যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে একপর্যায়ে তিনি ওই শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে চিকিৎসাসহায়তা চান। এ সময় ওই নারী চিকিৎসক আরেকজন চিকিৎসক নিয়ে তাঁর শয্যার দিকে রওনা হন। পথিমধ্যে তিনি ওই নারী চিকিৎসকের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের মতো সুন্দরী নাতিন আমারও আছে, তারা তোমাদের মতো এত অমানবিক নয়।’ এ কথা বলার পর ওই চিকিৎসকেরা চলে যান। কিছুক্ষণ পর একজন পুরুষ চিকিৎসক পুলিশ নিয়ে এসে তাঁকে শাসান।

পুরুষ চিকিৎসকটি অমর চাঁদকে ‘তুইতোকারি’ করে কথা বলার পাশাপাশি খারাপ আচরণ করতে থাকেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, রাত দেড়টার দিকে অমর চাঁদকে ওই পুরুষ চিকিৎসক পাঁজাকোলা করে শয্যা থেকে চিকিৎসকের কক্ষের পাশে উঠিয়ে এনে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল তাঁকে কিলঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তাঁর মুঠোফোনও কেড়ে নেন। পরে ওই সংঘবদ্ধ দলটি তাঁকে জোরপূর্বক কিছু বলিয়ে রেকর্ড করে নেয়। পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে ভয়ে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

অমর চাঁদ দাস বলেন, ওসমানী হাসপাতাল ও কলেজেই তিনি তাঁর মরণোত্তর চক্ষু ও দেহ দান করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকও। প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠক ও সমাজসেবী হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই মানবসেবায় আছেন। তাঁর প্রতি চরম অমানবিক আচরণ ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছেন। খতিয়ে দেখতে একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

তবে ঘটনার পরদিন তাঁরা (শিক্ষানবিশ চিকিৎসক) তাঁর (অমর চাঁদ) সম্পর্কে অশালীন কথা বলা ও অশালীন আচরণের অভিযোগ এনেছেন। এক নারী চিকিৎসকের কর্তব্যরত অবস্থায় রোগীর দ্বারা হয়রানিমূলক আচরণের কারণে কর্তব্যপালনে তাঁরা (শিক্ষানবিশ চিকিৎসক) নিরাপত্তাহীন ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছেন বলেও অভিযোগ করেন।

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, যেহেতু শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিতে চেয়েছিলেন, তাই তাঁদের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর (অমর চাঁদ) অভিযোগ আসে। যেহেতু উভয় পক্ষই অভিযোগ করেছেন, তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।