সাভারে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার দাবি

সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরীতে ১২ দফা দাবিতে আজ সোমবার শোভাযাত্রা বের করে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন
ছবি: প্রথম আলো

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে ঢাকার সাভারে আজ সোমবার মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মী শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেন।

আজ সকালে সাভারের আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। পরে সেখান থেকে পৃথকভাবে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। পরে শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আশুলিয়ায় বিনোদনকেন্দ্র ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশে সমাবেশ করেন। সমাবেশে তাঁরা পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করাসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

সমাবেশে মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সালেহা ইসলাম বলেন, পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা করতে হবে। এ ছাড়া শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শ্রমিকদের মজুরি যে পরিমাণ বেড়েছে, তার চেয়ে বেড়েছে উৎপাদনের চাপ। শ্রমিকেরা ভালো নেই।
বেলা ১১টার দিকে সাভারের রানা প্লাজার সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন ও প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন যৌথভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।

ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘শ্রমিকেরা যে মজুরি পান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে তাঁদের দিনে দুই বেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই কঠিন। মহান মে দিবসে সরকারের কাছে আমাদের দীর্ঘদিনের পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণসহ অন্য দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।’  

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগরীতে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে ১২ দফা দাবি জানায় ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। পরে সেখান থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি চামড়াশিল্প নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মে দিবসে আমরা ট্যানারি শ্রমিকদের পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি জানাচ্ছি। আশা করছি সরকার ও মালিকপক্ষ ৩ মাসের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে। দাবি আদায় না হলে পরে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব।’  

১২ দফার মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ও নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি এবং সিবিএ চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রেডের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতকরণ, ট্যানারিতে শ্রম আইনের সব বিধান বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন, চামড়াশিল্প নগরীতে একটি পূর্ণাঙ্গ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিতকরণ, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ সনদ পাওয়ার জন্য সিইটিপি কার্যকর করা, অসৎ উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের হয়রানি ও বরখাস্ত বন্ধ করা, ঠিকাদার বা সহ-কন্ট্রাক্টরদের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করা, আইএলও কনভেনশন ’৮৭ ও ’৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, ট্যানারিশিল্পের জন্য গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও ট্যানারিশিল্পকে আনুষ্ঠানিক সেক্টরের ধারাবাহিকতায় ফিরিয়ে আনা।