অযত্ন–অবহেলায় ধুঁকছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক, আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকেরা

বেঞ্চের পাইপ চুরি হয়ে গেছে। সেখানে এখন পাইপের বদলে বাঁশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে
ছবি: প্রথম আলো

পর্যটকদের অন্যতম আকষর্ণের একটি স্থান হচ্ছে মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ি অঞ্চলের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রতিদিনই স্থানীয় ও দেশের দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানে বেড়াতে আসেন। উৎসব-পার্বণে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক। কিন্তু টিলাধসসহ বিভিন্ন কারণে পার্কের বসার বেঞ্চ নষ্ট হয়েছে। পায়ে চলার পথের টাইলসও ভেঙে গেছে। শৌচাগারসহ অন্য সুযোগ–সুবিধাও আধুনিক নয়। প্রায় এক দশকের মধ্যে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে পরিকল্পিত কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। এতে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক অনেক পর্যটকের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছরের মধ্যে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে আর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সবশেষ ২০১১ সালে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের বসার জন্য অ্যালুমিনিয়ামের পাইপের ছয়টি বেঞ্চ ও তিনটি শেড তৈরি করা হয়েছিল। এখন আছে তিনটি বেঞ্চ। যেগুলো আছে, সেগুলোরও বসার পাইপ নেই। বেঞ্চ বসানোর এক বছরের মধ্যেই বেঞ্চের পাইপ চুরি হয়ে যায়। এসব বেঞ্চে এখন পাইপের বদলে বাঁশ দেওয়া হয়েছে। এতে পর্যটকদের সেখানে বসার মতো অবস্থা নেই।

এদিকে ২০১৬ সালে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতঘেঁষা একটি টিলা থেকে পাথরখণ্ড ও গাছপালা ধসে পড়ে। এ সময় বসার স্থান ও শেড নষ্ট হয়েছে। টিলাধসের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এগুলো আর মেরামত করা হয়নি। এরপর একাধিকবার টিলাধসের ঘটনা ঘটেছে। ইকোপার্কে পায়ে চলার পথে টাইলসের ওপর শেওলা জমেছে। কোনো কোনো জায়গায় টাইলস ভেঙে গেছে। বর্ষাকালে এসব টাইলস পিচ্ছিল হয়ে যায়। এতে পা পিছলে পর্যটকেরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন। এ ছাড়া পুরো পার্কজুড়ে পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য শৌচাগার আছে মাত্র একটি। সেটিও খুব একটা ব্যবহার উপযোগী নয়। ভালো শৌচাগার না থাকায় অনেক পর্যটকই বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন।

২০১৩ সালে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে শিশু ও পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের জন্য দুটি কটেজ করা হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। বাড়তি আকর্ষণ তৈরিতে স্থানীয়ভাবে এ কাজটুকু করা হয়েছে।

পর্যটকদের অন্যতম আকষর্ণের স্থান মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ি অঞ্চলের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আবেদ আহমদ বলেন, এখানকার সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে পরিচ্ছন্নতার অভাব। জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের বসার ও বিশ্রামের ভালো ব্যবস্থা নেই। অথচ প্রকৃতিকে রক্ষা করে পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতকে সাজানো যেত। ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ ভালো হলে আরও বেশি মানুষ এখানে বেড়াতে আসতেন। সরকারি রাজস্বও বাড়ত, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও লাভবান হতেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখানে তেমন দৃষ্টি দিচ্ছে না।

স্থানীয় ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার আমজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক যুগে এখানে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এটা নিয়ে পর্যটকেরা প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমরা চাই, এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হোক, যেন মানুষ মাধবকুণ্ড এসে প্রশান্তি নিয়ে ফিরে যেতে পারে।’

ইকোপার্কের যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা–আবর্জনা
ছবি: প্রথম আলো

বন বিভাগের বড়লেখা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক থেকে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭ হাজার টাকা। এই ইকোপার্কে প্রতিদিন নানা বয়সের ২০০ থেকে ৫০০ পর্যটক আসেন। বিভিন্ন উৎসব বা লম্বা ছুটিতে এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের আয়তন ২৬৭ একর।

বন বিভাগের বড়লেখার রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের চাহিদার দিকটি বিবেচনায় রেখে বসার বেঞ্চ, শৌচাগার, গাইড ওয়াল তৈরির প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের টাইলস বিভিন্ন স্থানে ভেঙেছে। এগুলোও সংস্কার করা হবে। ২০২৩ সালেই এসব প্রকল্পের কাজ করা হবে। তবে ইকোপার্কে জায়গা কম। যে কারণে শোভাবর্ধনকারী বেশি কিছু করার সুযোগ নেই। এরপরও পথের পাশে মহুয়া, বকুল, জারুল, সোনালুসহ বিভিন্ন জাতের শোভা বাড়ানোর গাছের চারা লাগানো হয়েছে। এগুলোতে ফুলও আসতে শুরু করেছে।