মনোহরদীতে কিশোরের ছুরিকাঘাতে আহত তরুণের মৃত্যু

মো. শরীফ
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থী কিশোরের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন মো. শরীফ (২১) নামের এক তরুণ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

তিন দিন আগে গত সোমবার বিকেলে উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপুর গ্রামে ওই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। শরীফ উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নের বাঘবের গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে। এদিকে ১৭ বছর বয়সী অভিযুক্ত ওই কিশোর স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার বাড়ি চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপুর গ্রামে।

নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল শরীফের। পারিবারিক চাপে ৯ মাস আগে শরীফ সৌদি আরবে যায়। সে বিদেশে চলে গেলে ওই মেয়েটি দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা জানতে পেরে বিদেশে যাওয়ার সাত মাসের মাথায় গত মার্চে দেশে ফিরে আসেন শরীফ। ফেরার পর ওই মেয়েটিকে বুঝিয়ে আবার সম্পর্কে জড়ান তাঁরা।

সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে মেয়েটি ওই কিশোরের মুঠোফোন দিয়ে টিকটক ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছাড়তেন। তার ওই টিকটক আইডির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও পাসওয়ার্ড ছিল ওই কিশোরের হাতে। সম্প্রতি ওই কিশোর প্রেমিকাকে হারিয়ে মেয়েটির টিকটিক আইডি থেকে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ভিডিও আপলোড দেয়। এ নিয়ে ওই কিশোরের সঙ্গে শরীফের দ্বন্দ্ব হয়। একাধিকবার আপত্তিকর ভিডিও না ছাড়তে নিষেধ করা হলেও ওই কিশোর থামছিল না।

একপর্যায়ে শরীফ ও মেয়েটি টিকটক আইডির নিয়ন্ত্রণ ও পাসওয়ার্ড ফেরত চাইলে ওই কিশোর তা দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার দুপুরে ওই কিশোরকে একটি আখড়ায় ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে ব্যাপক মারধর করা হয়। এ সময় মেয়েটি তাকে পায়ের জুতা খুলে পেটায়। এরপরই ওই কিশোর তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির টিকটক আইডি ফেরত দেয়। মোটরসাইকেলে উঠে ফেরার সময় শরীফের পিঠে, পেটে ও হাতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে ওই কিশোর। এর পর থেকে ওই কিশোর পলাতক।

শরীফ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকায় হস্থান্তর করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ব্যক্তির বাবা মফিজ উদ্দিন জানান, ‘আমার ছেলেটা তিন দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিল। তুচ্ছ ঘটনায় তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য ছেলের লাশ নিয়ে মর্গের সামনে বসে আছি আমরা। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

জানতে চাইলে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘কিশোরের ছুরিকাঘাতে আহত শরীফ নামের এক তরুণ তিন দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ বিকেলে মারা গেছেন বলে শুনেছি। এর আগে আহত হওয়ার ঘটনায় তাঁর বাবা ওই কিশোরসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন। মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’