বাউফলে মৃত ব্যক্তি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য 

মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলা হয়েছে। আদালত অধ্যক্ষ ও সভাপতিকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

নিয়ম লঙ্ঘন করে একই ব্যক্তিকে পরপর তিনবার সভাপতি করে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মোহসেন উদ্দিন নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গঠন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, ওই পরিচালনা কমিটির সদস্য করা হয়েছে ২২ বছর আগে মারা যাওয়া এক ব্যক্তিকে। আর অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে, যিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

এ ঘটনায় সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেছেন মো. নূর উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি। ওই মামলার পর আদালত মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষকে সশরীর আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। ওই মামলার বাদী নূর উদ্দীন ওই মাদ্রাসার জমিদাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ এ এস এম মুহিউদ্দিনের ছেলে। 

মামলার এজাহার, মাদ্রাসা কার্যালয় ও সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির ১৪ নম্বর ক্রমিকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে মো. আফসার উদ্দীন আহম্মদকে, যিনি ২০০১ সালের ২৭ জুলাই মারা গেছেন। কমিটির ১১ নম্বর ক্রমিকে অভিভাবক সদস্যপদে মো. গোলাম মস্তফা নামের এক ব্যক্তির নাম রয়েছে। তিনি এ কমিটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। শিক্ষানুরাগী সদস্য করা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কালাইয়া বন্দরের বাসিন্দা এ এস এম আবদুল হাই নামের এক ব্যক্তিকে।

২০২২ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ওই পরিচালনা কমিটির ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল অনুমোদন দেয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. রেজাউল হক।

সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশিত হলে চলতি মাসের ২৪ মে আদালতে মামলা করেন নূর উদ্দীন। আদালত ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সভাপতি ও অধ্যক্ষকে সশরীর আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বাদী নূর উদ্দীন অভিযোগ করেছেন, ‘অধ্যক্ষ সাহেব দুর্নীতিকে হালাল করার জন্য অভিভাবকদের না জানিয়েই তাঁর পছন্দের লোক দিয়ে সব সময় পকেট কমিটি গঠন করেন।’

এ ছাড়া বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা (গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০০৯ (২০১২ পর্যন্ত সংশোধিত)–এর ৮(২) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, এক ব্যক্তি দুটির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না। অথচ মোসারেফ হোসেন সেই বিধিও লঙ্ঘন করেছেন। মোসারেফ হোসেন বর্তমানে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি। এসব প্রতিষ্ঠান হলো কালাইয়া কামিল মাদ্রাসা, মোহসেন উদ্দিন নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ও উত্তর দাসপাড়া দাখিল মাদ্রাসা।

 মোহসেন উদ্দিন নুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোসারেফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, একই ব্যক্তি দুটির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন না—এ–সংক্রান্ত বিষয় তাঁর জানা নেই। তবে তিনি যে একটি ফাজিল ও একটি কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং একটি দাখিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আবদুর রহিম বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নাম বর্তমান পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, এ কথা সত্য। তবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভুল করেছে। একই ব্যক্তিকে কীভাবে পরপর তিনবার সভাপতি করলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ–সংক্রান্ত পরিপত্র তিনি পাননি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, তিনি সম্প্রতি যোগদান করেছেন। তবে মৃত ব্যক্তির নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’