সুন্দরবনের পাশে সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে কার্গো জাহাজডুবি

খুলনার দাকোপের নলিয়ান এলাকায় সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে জাহাজ ডুবে যাওয়ার মুহূর্তছবি: প্রথম আলো

সুন্দরবনের মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে শিবসা নদীতে ফ্লাই অ্যাশ (সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল) নিয়ে একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে খুলনার দাকোপের নলিয়ান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জাহাজটি ভারত থেকে ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে সুন্দরবনের মাঝের নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার সহসভাপতি মো. মাঈনুল হোসেন বলেন, ভারতের হলদিয়া বন্দর থেকে ১ হাজার ৪২২ মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ বোঝাই করে এমভি ‘গারোহেরা’ কার্গো জাহাজটি সুন্দরবনের আন্টিহারা নৌপথ দিয়ে মোংলার দিকে যাচ্ছিল। গতকাল বেলা দুইটার দিকে সুন্দরবনের শিবসা নদীর নলিয়ান এলাকায় পৌঁছালে জাহাজটি ডুবোচরে আটকে একদিকে হেলে যায়। পরে তলা ফেটে ঘটনাস্থলে ডুবে যায় জাহাজটি।

মাঈনুল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে ১২ নাবিক ও কর্মী ছিলেন। তাঁরা সাঁতরে তীরে উঠে যান। সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই নদী বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথ। জাহাজটি ডুবে পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে সেখান দিয়ে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

কার্গো জাহাজে থাকা ফ্লাই অ্যাশ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে দ্রুত জাহাজটিকে সেখান থেকে সরানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যেখানে জাহাজটি ডুবেছে, সেখান থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব মাত্র আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার। প্রতিনিয়ত সেখানকার জোয়ার-ভাটার পানি সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করে। এতে ফ্লাই অ্যাশ সুন্দরবনের মধ্যে প্রবেশ করে জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে জলজ প্রাণীর জন্য এটা আরও বেশি ক্ষতিকারক হবে।

জাহাজটির মাস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৫ ডিসেম্বর ভারতের বজবজা এলাকা থেকে ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে তাঁরা রওনা দেন। শুক্রবার সকালে চরে আটকে জাহাজের তলা ফেটে যায়। জাহাজটির মূল্য ছয়–সাত কোটি টাকা। তবে ফ্লাই অ্যাশের মূল্য কত, তাঁর জানা নেই। জাহাজে থাকা সবাই তীরে উঠতে পেরেছেন। ফ্লাই অ্যাশ নিয়ে নরসিংদীর ঘোড়াশালের সেভেন রিংস সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে তিনি জানান।

নলিয়ান নৌ থানার উপপরিদর্শক তারক বিশ্বাস বলেন, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জাহাজের কর্মীরাও নিরাপদে আছেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যাতে মালিকপক্ষ দ্রুত জাহাজটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।

সুন্দরবনের বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনের ক্ষতি বিবেচনা করে দীর্ঘদিন ধরে ওই নৌ রুটটি ব্যবহার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া পাওয়া হচ্ছে না। পশুর নদের গভীরতা অনেক বেশি। সুন্দরবনের আন্টিহারা-বজবজা নৌ রুটটি ব্যবহার না করে পশুর নদ দিয়ে জাহাজ চলাচল করলে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। ওই সময়টুকু বাঁচাতে এই নৌ রুট ব্যবহারে সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।