বাগানের কমলা-পেয়ারা ঝরে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় মোহাম্মদ আলী

ভারী বৃষ্টিতে বাগানের কমলা ঝরে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় চাষি মোহাম্মদ আলী। গত শুক্রবার সকালে জৈন্তাপুর উপজেলার গৌরীশঙ্কর গ্রামেছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের জৈন্তাপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (৬৫)। পাঁচ বছর ধরে প্রায় ২৫ একর বাগানে তিনি কমলা, পেয়ারা ও পেঁপের চাষ করেন। বছরখানেক আগে শুরু করেন মাল্টা চাষ। প্রতিবছর ফল বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগান তিনি। কিন্তু এবার বাগান থেকে এক টাকার কমলা ও পেয়ারা বিক্রি করতে পারেননি। মোহাম্মদ আলীর ধারণা, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কমলা ও পেয়ারা ঝরে গেছে। এ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তিনি।

গত শুক্রবার সকালে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গৌরীশঙ্কর গ্রামে মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। টিলা এলাকায় বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন ফলদ গাছ। বাড়িতে গরু ও মুরগি পালন করলেও ফলের ওপর নির্ভরশীল তিনি। ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাগান পরিচর্যা ও গরু পালন করে তাঁর দিন চলে যায়।

কমলায় ভালো ফলনের আশা করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু ফল ধরলেও সব ঝরে গেছে। এখন সংসার নিয়ে চিন্তিত তিনি। তবে গরুর খামারের আয় দিয়ে সংসার চালাবেন বলে তিনি জানান।

মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর ফল বিক্রি করে সাত সদস্যের পরিবারের খরচ চালান তিনি। তবে এবার গাছে ফল ধরেনি। কিছু কমলা হলেও ঝরে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এমনটি হয়েছে বলে তাঁর ধারণা। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর ২৫০টির বেশি কমলাগাছ আছে তাঁর। প্রতিবছর কমলার বাগান থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করতেন। এবার একটা কমলাও বিক্রি করতে পারেননি। গত বছর লাগানো সাড়ে ৪ হাজার মাল্টাগাছে কিছু মাল্টা ধরেছে। মাল্টা বিক্রি করে ২০ হাজার টাকার মতো আয় করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতি কেজি মাল্টা ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। দেশি মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও খেতে মিষ্টি বলে ক্রেতারা পছন্দ করেন। মাল্টাগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করা লাগেনি। পাইকার ও স্থানীয় ব্যক্তিরা বাড়িতে এসে মাল্টা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন।’

কমলায় ভালো ফলনের আশা করেছিলেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু ফল ধরলেও সব ঝরে গেছে। এখন সংসার নিয়ে চিন্তিত তিনি। তবে গরুর খামারের আয় দিয়ে সংসার চালাবেন বলে তিনি জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বৃষ্টিপাত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে কমলা ঝরে গিয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অন্য বাগান থেকে এমন কোনো তথ্য আসেনি। ওই খামারি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে যোগাযোগের বিষয়টি জানানোর পর মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলায় দুই মাস ধরে কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন না। সেখানে এক সপ্তাহ আগে একজন কৃষি কর্মকর্তা যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।