উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, আরসার শীর্ষ কমান্ডারসহ দুই রোহিঙ্গা খুন

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে আরএসওর সদস্যরা উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে গুলি ও জবাই করে আরসার শীর্ষ কমান্ডার মো. ইউসুফকে (৩৮) হত্যা করে। এর জের ধরে জামতলী আশ্রয়কেন্দ্রে আরএসওর সদস্য মো. আরাফাতকে ছুরিকাঘাতে খুন করে আরসার সদস্যরা।

আরসার কমান্ডার ইউসুফ বালুখালী-৯ নম্বর আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা। অপর দিকে আরাফাত জামতলী আশ্রয়শিবিরের ইমান হোসেনের ছেলে ও  আরএসওর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, বালুখালী ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। সেখানে ইউসুফ নামের একজন নিহত হন। তিনি বালুখালী আশ্রয়শিবিরে বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে।

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের একজন রোহিঙ্গা মাঝি বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষ ৩০ থেকে ৩৫টি গুলিবিনিময় করে। এ সময় আরএসওর সদস্যদের ছোড়া গুলিতে আরসার শীর্ষ কমান্ডার মো. ইউসুফ গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান। পরে তাঁকে জবাই করে হত্যা করা হয়।

অপর দিকে ওই ঘটনার জের ধরে আরসার সদস্যরা উখিয়ার পালংখালীর জামতলী আশ্রয়শিবিরে আরএসওর সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আরাফাত নামে আরএসওর এক কিশোর সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে আরসা সদস্যরা।

ওই আশ্রয়শিবিরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ও আরএসওর হাতে একের পর এক সদস্য নিহতের ঘটনায় দুর্বল হয়ে পড়েছিল আরসা। আরসার শীর্ষ কমান্ডার মো. ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিলেন। আশ্রয়শিবিরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ইউসুফকে সম্প্রতি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পাঠান আরসার প্রধান।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক স্থান থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার পর আজ বুধবার সকালে ময়নাতদন্তে জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের আটক করতে অভিযান চলছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোয় আরসা ও আরএসওর সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এসব সংঘর্ষে গত ছয় বছরে খুন হয়েছেন ১৯০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা। অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগির জের ধরে।

দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী ছাড়াও আরও ১০-১২টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী আশ্রয়শিবিরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে।