ভ্যান ছিনতাই করতে শিশুকে হত্যা, ৭ দিন পর মাটিচাপা মরদেহ উদ্ধার

নিখোঁজ হওয়ার সাত দিন পর শিশু রিফাতের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার নরকোনা মধ্যপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পর ১২ বছরের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে বড়গ্রাম ইউনিয়নের নরকোনা মধ্যপাড়া গ্রামের একটি শর্ষেখেত থেকে মাটিচাপা দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গতকাল রোববার রাতে সন্দেহভাজন এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। শিশুটিকে গলা কেটে হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যার শিকার শিশুটির নাম মো. রিফাত (১২)। সে উপজেলার মির্জাকান্দা গ্রামের কাতলসা শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। রিফাত বড়গ্রাম ইউনিয়নের মির্জাকান্দা গ্রামের দিনমজুর মফিজুল ইসলামের ছেলে। তার মায়ের নাম আনোয়ারা খাতুন। অভাবের সংসারে রিফাত মাঝেমধ্যে ভাড়ায় ভ্যান চালাত।

রিফাত নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত ২৯ জানুয়ারি মুক্তাগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বড় ভাই আরিফ হোসেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, রিফাত ২৭ জানুয়ারি বিকেল চারটার দিকে মির্জাকান্দা গ্রামের হাফিজুল ইসলামের ভ্যানগাড়ি ভাড়ায় নিয়ে চালানোর জন্য বের হয়। ইউনিয়নের মোগলটুলা বাজারে মা আনোয়ারা খাতুনের সঙ্গে তার দেখা হয়। মাকে ভ্যানে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে সে চেচুয়া বাজারের দিকে যায়। কিন্তু সেদিন রাতে আর বাড়ি ফেরেনি রিফাত। তার মুঠোফোনের নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান মেলেনি।

এদিকে রিফাতের মুঠোফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে গতকাল রাতে মুক্তাগাছার ভাবকীর মোড় এলাকা থেকে এক কিশোরকে (১৭)  আটক করে পুলিশ। তার বাড়ি বড়গ্রাম ইউনিয়নের জয়রামপুর গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে। ওই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রিফাতের ভ্যান ছিনতাই করতে তাকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। মিরাজের তথ্যানুযায়ী, আজ সোমবার সকালে শিশু রিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ওই কিশোরের সঙ্গে আরও একজন ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভাবের সংসারে রিফাত অনিয়মিতভাবে ভাড়া নেওয়া ভ্যান চালাত। ছোট দেখে রিফাতের ভ্যানটি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে ওই দুজন। রিফাতকে হত্যার পর লাশ পুঁতে রেখে ভ্যানটি ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

আজ সকালে নরকোনা মধ্যপাড়া গ্রামে শর্ষেখেতে রিফাতের মরদেহ উদ্ধার করতে যায় পুলিশ। মরদেহটি সাদা একটি বস্তায় ভরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। এ সময় রিফাতের মা-বাবা, ভাইসহ স্বজনেরা সেখানে গিয়ে আহাজারি করেন।

রিফাতের বড় ভাই আরিফ হোসেন ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। হয় ফাঁসি চাই, নইলে আমার ভাইকে জীবিত এনে দিবে। আর কিচ্ছু চাই না। আমাদের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না।’

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ভ্যান ছিনতাই করতেই ওই কিশোরসহ দুজন শিশু রিফাতকে হত্যা করেছে। রক্তমাখা ছুরিটিও উদ্ধার করা হয়েছে। মুঠোফোন ট্রেকিং করে এক কিশোরকে ধরার পর তার দেখানো স্থান থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকজনকে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে; ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।