বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শেষে মেয়েকে তুলে দেন অটোরিকশায়, ১০ মিনিট পর পেলেন মৃত্যুর খবর
স্নেহা চক্রবর্তী সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সুবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ নিয়ে পরিবারের সবাই ছিলেন খুশি। বুধবার ছিল ভর্তির দিন। সকালে বাবা স্কুলশিক্ষক বিপুল চক্রবর্তী তাঁকে নিয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে মেয়েকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেন বাড়িতে ফেরার জন্য। কিন্তু এর ১০ মিনিট পরই সব শেষ হয়ে যায়। সড়কে প্রাণ যায় স্নেহা চক্রবর্তীর।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে অবস্থিত। সুবিপ্রবিতে গত বছর পাঠদান শুরু হয়। এবার দ্বিতীয় ব্যাচে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন।
শান্তিগঞ্জ থেকে ফেরার পথে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বুধবার দুপুরের এ দুর্ঘটনায় স্নেহা চক্রবর্তীর সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থীসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আফসানা জাহান খুশি নামের সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। অন্যজন শফিকুল ইসলাম, তিনি একজন ব্যবসায়ী। আফসানা জাহান চলতি শিক্ষাবর্ষে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে তিনি। শহর থেকেই শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতেন আফসানা জাহান।
বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্নেহা চক্রবর্তীর লাশের পাশে আহাজারি করছেন মা জয়তী চক্রবর্তী ও ছোট ভাই সূর্য চক্রবর্তী। তাঁদের কান্না যেন থামছেই না। কোনোভাবেই স্নেহার মাকে সান্ত্বনা দিতে পারছেন না কেউ। আশপাশে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও যেন শোকে কাতর। ছোট ভাই সূর্য চক্রবর্তী বড় বোন স্নেহার লাশের পাশে বসে আহাজারি করে মাকে বলছিল, ‘মা, তুমি কাইন্দ না। কিচ্ছু অইছে না, আমরা আপারে নিয়া ঢাকা যাইমু, সব ঠিক অইজিব...।’
স্নেহা চক্রবর্তীর আত্মীয় নিক্সন চক্রবর্তী জানান, স্নেহার বাবা বিপুল চক্রবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁদের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামে। বিপুল চক্রবর্তীর কর্মস্থলও শান্তিগঞ্জে। কিন্তু ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য তিনি পরিবার নিয়ে জেলা শহরে থাকেন। এখান থেকেই কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করেন। একমাত্র ছেলে সূর্য চক্রবর্তী সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। একমাত্র স্নেহা চক্রবর্তী শহরের সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর এবার সুবিপ্রবিতে সিএসইতে ভর্তির সুযোগ পান। বুধবার ছিল ভর্তির দিন।
সুবিপ্রবির ক্যাম্পাস পার হয়েই নিজের কর্মস্থলে যেতে হয় বিপুল চক্রবর্তীকে। তাই সকালে মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে যান তিনি। ক্যাম্পাসে ভর্তি কার্যক্রম শেষে মেয়েকে একটি অটোরিকশায় তুলে দেন শহরে ফেরার জন্য। কিন্তু এর ১০ মিনিট পরই পথে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় এসে একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে স্নেহা চক্রবর্তীসহ তিনজন মারা যান। আহত হন অটোরিকশার চালক ও আরেক শিক্ষার্থী।
খবর পেয়ে বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে আসেন সুবিপ্রবির প্রক্টর শেখ আবদুল লতিফ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকালে মেয়েটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর তার এমন মৃত্যু, বড় দুঃখজনক। আমরা কীভাবে পরিবারকে সান্ত্বনা দেব।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সড়কে অনেক ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলে। অনেক চালক অদক্ষ। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।