রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায় গতকাল বুধবার দুপুরে একটি ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুল মালেক (৪৫)। পাশেই কয়েকটি মুরগির দোকান। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর এক বিক্রয়কর্মীর কাছ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে এক কেজি মুরগির পা কিনলেন। পরে পাশের সবজির দোকান থেকে ১০০ গ্রাম আদা কেনেন তিনি।
মালেকের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার কাপাশিয়া এলাকায়। পরিবারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার পর আলাদা সংসার তাঁর। মালেক মূলত ঘরে টিন লাগানোর কাজ করেন। রাজশাহী শহরে এসেছিলেন কাজের খোঁজে। নগরের পঞ্চবটি এলাকায় ইটের খোয়া টানার কাজ পেয়েছিলেন। তা করেই বাড়িতে ফিরছিলেন। হঠাৎ স্ত্রীর কথা মনে পড়ায় মুরগির দোকানের সামনে থামেন।
বাজারে এক কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৪২, আলু ৪৫, করলা ৭০, ঢ্যাঁড়স ৪০, পেঁপে ২০, কাঁকরোল ৫৫ থেকে ৬০, কচু ৮০, ছোট কুমড়া ৪০, রসুন ২৬০, পেঁয়াজ ৭০, আদা ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সবজি থেকে কাঁচা মসলার দাম ৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ৭০ টাকা।
কেনাকাটার পর মালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে টিন লাগানোর কাজ করি। দৈনিক ৭০০ টাকা হয়। কিন্তু তিন দিন কাজ থাকলে বাকি দিন হয় না। এ জন্য অন্য কাজও করতে হয়। কাজের জন্যই শহরে এসেছিলাম। বাড়িয়ালি (স্ত্রী) বলেছিল মুরগির ঠ্যাংঠুং পাওয়া যায় কি না, আনতে। তার কথা মনে পড়ায় মুরগির ঠ্যাং কিনেছি। ৮০ টাকা কেজি নিয়েছে। আর আদা কিনলাম ১০০ গ্রাম ২৫ টাকা দিয়ে। জিনিসপত্রের খুব দাম বেড়ে গেছে। কষ্ট করেই চলতে হয়। ওপরওয়ালাই (আল্লাহ) চালায়।’
মুরগি না কিনে পা কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছয় মাস আগেও মুরগির পা কিনেছিলেন। মাঝে মাছভর্তা খেয়েই থেকেছেন। আবার মুরগির পা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, একজনের ইটের খোয়া টেনে দেওয়ায় ৩০০ টাকা দিয়েছেন। পরনের লুঙ্গি দেখিয়ে বলেন, খোয়া টানতে গিয়ে লুঙ্গি ছিঁড়ে গেছে।
বাজারে প্রতিটা জিনিসের দামে নৈরাজ্য চলছে। বাজারে কোনো তদারকি নেই। ইচ্ছেমতো বেচাবিক্রি হচ্ছে।
মালেকের মতো বাজারে এসে হোঁচট খাচ্ছেন অনেকেই। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি থেকে শুরু করে সবকিছুর দামই বেড়েছে। বিনোদপুর বাজারের মুরগি বিক্রেতা ওবায়দুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবারও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছেন ১৬৫ টাকা কেজিতে। শুক্রবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭০ টাকা। বুধবার আরও ১০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। খামার পর্যায়ে মুরগির দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে তাঁদের বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। এখন ক্রেতারা মুরগির পা কিনছেন বেশির ভাগ সময়।
নগরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এক কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৪২, আলু ৪৫, করলা ৭০, ঢ্যাঁড়স ৪০, পেঁপে ২০, কাঁকরোল ৫৫ থেকে ৬০, কচু ৮০, ছোট কুমড়া ৪০, রসুন ২৬০, পেঁয়াজ ৭০, আদা ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সবজি থেকে কাঁচা মসলার দাম ৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ৭০ টাকা।
বুধবার সকালে নগরের সাগরপাড়া বাজারে কচু কিনতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন ঘোড়ামারা এলাকার আমজাদ হোসেন। তিনি প্রথমে একটি সবজির দোকানে গিয়ে জানতে পারেন, কচুর কেজি ৮০ টাকা। দাম বেশি চাইছে জানতে পেরে আরেক দোকানে যান, সেখানে কচুর কেজি ৯০ টাকা চান বিক্রেতা। তখন ওই ক্রেতা বলে ওঠেন, ১০ টাকা বাদ যাবে কেন? পরে আরেকটি দোকানে গিয়ে সত্যিই জানতে পারলেন, কচুর কেজি ১০০ টাকা। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিটা জিনিসের দামে এ ধরনের নৈরাজ্য চলছে। বাজারে কোনো তদারকি নেই। ইচ্ছেমতো বেচাবিক্রি হচ্ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা সিন্ডিকেট করে নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বাণিজ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যে সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়ত্বের কথা বলে ফেলেন। এভাবে কোনো দিনই বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের অভিযান চলছে, তা লোকদেখানো।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, তাঁরা টানা ২৪ দিন ধরে অভিযান চালাচ্ছেন। প্রতিদিনই জরিমানা করা হচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা দাম খুব বেশি বাড়াতে পারছেন না।