ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গর্ত-খানাখন্দ, ওয়েব্রিজ স্কেলে উঠতে বাড়তি ভোগান্তি
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে খানাখন্দের কারণে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের কাছে বিআইডব্লিউটিসির ওয়েব্রিজ স্কেলে পণ্যবাহী গাড়ি ওঠা এবং যান চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে জমা পানিতে খানাখন্দ বোঝার উপায় না থাকায় বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালকদের। দুই মাসের বেশি সময় ধরে এমন পরিস্থিতি চললেও এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ঘাট। এই রুটের গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা রাজধানীমুখী পণ্যবাহী গাড়ি ফেরিতে ওঠার আগে উপজেলা পরিষদের কাছে স্থাপিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ওয়েব্রিজ স্কেলে ওজন দিতে হয়। স্কেলে ওঠার আগে মহাসড়কের অন্তত ১০০ ফুটের বেশি এলাকায় বড় গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। নদী পাড়ি দিতে আসা এসব গাড়ি খানাখন্দ ও গর্ত পার হতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে গর্ত বোঝার উপায় না থাকায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ভারী যানবাহন উল্টে পড়ার উপক্রম হয়। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীমুখী পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি দ্রুত ছুটছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব গাড়ি আগে ফেরিতে ওঠার নির্দেশনা থাকলেও বিআইডব্লিউটিসির ওজন স্কেলের কাছে এসে থেমে যাচ্ছে। খানাখন্দ আর গর্তে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে মহাসড়কে যানবাহনের লম্বা লাইন হয়েছে।
ঝিনাইদহ থেকে আসা গরুবোঝাই ট্রাকের চালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘স্কেলে ওঠার আগে ভয়ে থাকতে হয়। বড় গর্ত ও খানাখন্দ হওয়ায় গাড়ি উল্টে পড়ার উপক্রম হয়। বৃষ্টিতে গর্তগুলো বোঝার উপায় না থাকায় সরাসরি স্কেলে উঠতে থাকি। এ সময় গর্তে চাকা আটকে অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাই।’
শিশুখাদ্যবোঝাই গাড়ির চালক আকরাম হোসেন বলেন, ওয়েব্রিজে উঠতে গিয়ে গর্তে চাকা আটকে অল্পের জন্য গাড়ি ওল্টায়নি। হেলপারকে দ্রুত নেমে দেখতে বললে তিনি জানান, বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ। ঈদের আগে গাড়ির চাপ বেড়েছে। দ্রুত সড়ক সংস্কার না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছে।
স্থানীয় মোটর গ্যারেজের কর্মী সুজন সাহা বলেন, ‘অনেকেই খানাখন্দ ও গর্ত বুঝতে না পারায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন। গত সোমবার গর্তে পড়ে এক মোটরসাইকেল আরোহী উল্টে গিয়ে গুরুতর আহত হন। এ সময় দ্রুতগামী কোনো গাড়ি থাকলে হয়তো তাঁকে চাপা দিয়ে চলে যেত। আমরা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিই।’
ওয়েব্রিজ স্কেলে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর মাসুম বিল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। মহাসড়কে গাড়ি চলাচলে সমস্যার পাশাপাশি স্কেলে ওঠার সময় চালকেরা বাড়তি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হয়ে ছোটখাটো গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ওয়েব্রিজ স্কেলে বিআইডব্লিউটিসির নিজস্ব ১১০ ফুট সড়কে কিছু সমস্যা থাকলেও রোজার ঈদে সংস্কার করা হয়। কিন্তু তখন থেকে স্কেলসংলগ্ন সওজের সড়কের সমস্যা দিন দিন আরও বেশি নাজুক হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি। সওজের প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু আজও কাজ হয়নি।’
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী তুষার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে জরুরি সংস্কারের অংশ হিসেবে আজ-কালের মধ্যে ইটের টুকরা দিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হবে। ঈদের পর ভালোভাবে সংস্কার করে দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।