নরসিংদীর ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি হচ্ছে মাদ্রাসার কাছে
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ছন্দা সিনেমা হল স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয় পক্ষই বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
ছন্দা সিনেমা হল-সংশ্লিষ্ট লোকজন বলেন, আশির দশকে ছন্দা সিনেমা হলটি চালু হয়। বর্তমানে এটি রায়পুরার একমাত্র চালু সিনেমা হল। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী তিন দশক সিনেমা হলটি স্থানীয় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে সমাদৃত ছিল। তবে গত ১০ বছরে নানা কারণে দর্শকদের হলবিমুখতায় কোনোরকমে টিকে ছিল সিনেমা হলটি। দুই বছর আগে হলমালিক শামসুজ্জামান মানিক মারা গেলে মাসিক ১২ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। মো. সুলতান মিয়া নামের একজন হলটি ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন। হলটির জমির পরিমাণ ৩০ শতাংশ। আর এর পাশেই ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসার অবস্থান। এই মাদ্রাসা হলটি কিনে নিচ্ছে।
এ–সংক্রান্ত একটি ব্যানার কিছুদিন ধরে রায়পুরার হাসনাবাদ এলাকার ছন্দা সিনেমা হলের সামনে ঝোলানো আছে। সেখানে লেখা, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ছন্দা সিনেমা হলটি মাদ্রাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা। সাদকায়ে জারিয়ার এ মহৎ কাজে আপনাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।’
গতকাল শনিবার বিকেলে ব্যানারে থাকা মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে ধরেন মুকাররম হোসাইন নামের একজন। তিনি নিজেকে মাদ্রাসাটির জিম্মাদার পরিচয় দিয়ে ছন্দা সিনেমা হলটি কিনে নেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘মালিকের মৃত্যুর পর থেকেই সিনেমা হলটি বিক্রি হবে শুনে আসছিলাম। আমাদের মাদ্রাসার জায়গাও কম। তাই কেনার জন্য যোগাযোগ করি মৃত মালিকের মেয়ে ছন্দার (সায়মা নাজনিন) সঙ্গে। অন্য উত্তরাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এটি ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রির কথা বলেন। আমরা রাজি হয়ে যাই।’
মুকাররম হোসাইন আরও বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে ২০ লাখ টাকায় বায়না দলিল করেছি। আরও ১ কোটি ১০ লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পর সিনেমা হলটি আমরা বুঝে পাব। বাকি টাকা সংগ্রহের জন্য স্থানীয় লোকজন, সমাজের বিত্তবান মানুষ ও প্রবাসীদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। সবাই যাঁর যাঁর সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। ঈদের সময় পর্যন্ত আমরা মোট ৩২ লাখ টাকার মতো সংগ্রহ করতে পেরেছি। সিনেমা হলটি ভেঙে এখানে একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের খেয়াল আমাদের।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আগে এই সিনেমা হলে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধব মিলে দল বেঁধে সিনেমা দেখতে আসতাম। এখন নানা কারণে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে ইচ্ছা করে না। ভালো ছবি হলে মাঝেমধ্যে আসি। শুনেছি ছন্দা হলটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’
সিনেমা হলটির কর্মচারী আবুল কালাম বলেন, এই হলে আগে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়, দীর্ঘ লাইন ও কষ্ট করে টিকিট সংগ্রহ করার ঘটনা ছিল সাধারণ ও স্বাভাবিক। বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়।
হলটি ভাড়ায় চালানো মো. সুলতান মিয়া বলেন, ‘মাসিক ১২ হাজার টাকায় সিনেমা হলটি ভাড়ায় চালাচ্ছি। চারজন কর্মচারী আছেন, যাঁদের দৈনিক ৪০০ টাকা হাজিরা দিতে হয়। করোনার পর থেকে লোকসান গুনতে গুনতে এত দিন হলে সিনেমা চালিয়ে যাচ্ছি। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ নানা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ।’
মো. সুলতান মিয়ার আক্ষেপ, সিনেমা মুক্তির কিছুদিনের মধ্যে ইউটিউব বা অনলাইনে সিনেমা বিক্রি করে দেওয়া হয়। মানুষ তা মুঠোফোনে দেখে ফেলেন। এখন আর কেউ হলে সিনেমা দেখতে আসেন না। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন হলমালিকেরা। প্রতিদিন যদি ১০ থেকে ১২ জন হলে সিনেমা দেখতে আসেন, তাহলে এই ব্যবসা কীভাবে টিকবে?
সিনেমা হল বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে মালিকের মেয়ে সায়মা নাজনিন ছন্দা বলেন, ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত ছন্দা সিনেমা হলটি তাঁরা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাঁর বাবাও শেষ সময়ে এটা বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁদের পরিবারের লোকজন চাইছিলেন, হলটি এমন কোথাও বিক্রি হোক, যেখান থেকে মৃত বাবার জন্য দোয়া পাওয়া যাবে।