খুলনায় কারাগারে থাকা বিএনপি নেতা পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি
নাশকতার মামলায় এক মাস ধরে খুলনা কারগারে বন্দী খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য গাজী আফসার উদ্দিন (৪৫)। কারাবন্দী থাকলেও ১ এপ্রিল রাতে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে হওয়া মামলায় পুলিশ তাঁকে আসামি করেছে। আফসার উদ্দিন নগরের লবণচরা থানার জিন্নাহপাড়া চতুর্থ গলির বাসিন্দা।
বিএনপি ও খুলনা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার বেলা তিনটার দিকে খুলনা সদর থানার কে ডি ঘোষ রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। ওই রাতেই খুলনা সদর থানায় বিএনপির ৬০ নেতা-কর্মীর নামসহ এবং অজ্ঞাতনামা ৭০০-৮০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এই মামলার ৪০ নম্বর আসামি করা হয় গাজী আফসার উদ্দিনকে।
কারাগারে থাকার পরও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আসামি হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম দিন বিএনপির নেতা–কর্মীরা খণ্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা চালায় এবং তাঁদের লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে পুলিশ নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেয় এবং তাঁদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বিএনপির ১২ নেতা–কর্মী আহত হন। আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করল পুলিশ। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিল। আবার সেই মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপি নেতাকেও আসামি করা হলো। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে পুলিশ ঢালাওভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করছে।’
গত বছরের ২ ডিসেম্বর বিএনপির ৮০ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে খুলনা সদর থানার পুলিশ। ওই মামলার আসামি হিসেবে গত ২ মার্চ পুলিশ গাজী আফসার উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
গাজী আফসার উদ্দিনের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান ওরফে তুষার প্রথম আলোকে বলেন, খুলনা নগরের লোয়ার যশোর রোডের বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ভবন ধ্বংসের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগের ক্ষতিসাধন ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর বিএনপির ৮০ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে খুলনা সদর থানার পুলিশ। ওই মামলার আসামি হিসেবে গত ২ মার্চ পুলিশ গাজী আফসার উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। ৩ মার্চ থেকে আফসার উদ্দিন খুলনা কারাগারে রয়েছেন। উচ্চ আদালত থেকে গত ২৭ মার্চ তিনি জামিন পেয়েছেন। কিন্তু সেই আদেশ এখনো এসে পৌঁছায়নি। এ কারণে এখনো তিনি খুলনা কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে থেকে তিনি কীভাবে পুলিশের ওপর হামলা করলেন, প্রশ্ন করেন তিনি।
এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসান আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে যদি ওই আসামির কারাগারে থাকার বিষয়টি সত্য হয়, তাহলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১ এপ্রিল ঘটনার দিন বেআইনিভাবে আসামিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাধারণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং পুলিশের কর্তব্যে বাধা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া দায়িত্বপালনকালে আসামিরা পুলিশ সদস্যদের সাধারণ ও গুরুতর জখম করার অপরাধ ঘটান।
মামলার বাদী খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক অজিত কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, ভুলত্রুটি হতেই পারে। তদন্ত কর্মকর্তা এটা যাচাই–বাছাই করবেন।