প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, ১৫০ মিটারের কাজ বাকি

জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে এ সড়ক ‘প্রশস্ত ও মজবুতকরণ প্রকল্পের’ কাজ শুরু হয়।

মৌলভীবাজারের জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের শেষ প্রান্তে ১৫০ মিটার বেহাল। এতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের শেষ প্রান্তে ১৫০ মিটার জায়গা পাকাকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানটি খুঁড়ে রাখে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আপত্তির কারণে তারা কাজ করতে পারেনি। পরে বিএসএফ অনাপত্তি জানালেও এর আগেই সড়কের উন্নয়নকাজের প্রকল্পের মেয়াদ পার হয়ে যায়।

সড়কের ওই স্থান বেহাল হওয়ার কারণে বটুলি শুল্ক স্টেশন দিয়ে দুই দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে এ সড়ক ‘প্রশস্ত ও মজবুতকরণ প্রকল্পের’ কাজ শুরু হয়। ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন ও স্পেকট্রা নামের ফরিদপুরের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজ পায়। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের শেষ প্রান্তে বটুলি শুল্ক স্টেশনের কাছে খননযন্ত্র দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করে। কিন্তু ওই স্থান শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভেতরে পড়ায় বিএসএফ কাজে বাধা দেয়। এর কিছুদিন পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবারও সেখানে কাজ করার চেষ্টা চালায়। পরে বিএসএফ কড়া আপত্তি জানায়। এরই মধ্যে গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ওই স্থানে ১৫০ মিটারের কাজ বাকি রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন চলে যান।

এদিকে বিএসএফের আপত্তির পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে সড়কের ওই অংশের কাজের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিএসএফের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় বিএসএফ কাজে অনাপত্তির কথা জানিয়ে বিজিবিকে চিঠি দেয়।

গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, বটুলি শুল্ক স্টেশনের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাঘনা শুল্ক স্টেশন। দুই দেশের সংযোগস্থলে পাহাড়ি রাঘনা ছড়ার ওপর বেইলি সেতু। সেতুর বাংলাদেশ প্রান্তে ১৫০ মিটার জায়গা আগে খুঁড়ে রাখায় সেখানে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। সড়কটি কর্দমাক্ত। রপ্তানির জন্য মালবোঝাই কয়েকটি ট্রাক দূরে দাঁড় করিয়ে রাখা। শ্রমিকেরা মালামাল নামিয়ে কাঁধে করে কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে সেতুর কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। ভারত থেকে আমদানি করা নানা ধরনের মালামাল সেতুর ওপর থেকে একইভাবে ওই সড়ক দিয়ে নিয়ে আসছেন শ্রমিকেরা।

সেখানে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কাজ তদারকিতে ব্যস্ত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নাজমুল আলম ও শামীম আহমদ বলেন, বটুলি ও রাঘনা শুল্ক স্টেশন দিয়ে দুই দেশের মধ্যে গাড়ি পারাপারের অনুমোদন নেই। আগে বেইলি সেতুর এক প্রান্তে আমদানি ও অপর প্রান্তে রপ্তানি মালামালের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। সেতু ব্যবহার করে শ্রমিকেরা সহজে মালামাল ওঠানামা করতেন। সময়ও কম লাগত। কিন্তু ১৫০ মিটার সড়কের দুরবস্থার কারণে এ কাজে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। প্রায়ই বৃষ্টিতে মালামাল নষ্ট হয়। এতে তাঁদের ক্ষতি হচ্ছে।

বটুলি শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, এ শুল্ক স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিকজাতীয় বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী, তুলা, পারটেক্স বোর্ড ও জুতা ভারতে রপ্তানি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে সাতকরা ও আদা বাংলাদেশে আমদানি হয়।

বটুলি শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ বলেন, ১৫০ মিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে আমদানি-রপ্তানি আরও বাড়ত।

সওজ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন  বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৫০ মিটার সড়কের কাজ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিএসএফের আপত্তির কারণে সম্ভব হয়নি। বিএসএফের অনাপত্তির চিঠি পাওয়ার আগেই প্রকল্পের মেয়াদ সম্পন্ন হয়ে গেছে। ১৫০ মিটার সড়কের কাজের ব্যয় সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এরপরও ঠিকাদারকে দিয়ে ওই স্থানে কাজ করানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।