প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, করা হয়নি পৃথক ওয়ার্ড
ফরিদপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৪ জন। এ নিয়ে গত জানুয়ারি থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৯। এর মধ্যে ৯৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। বাকি ৮২ জনের চিকিৎসা চলছে। এ পর্যন্ত ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। জেলায় ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও তাঁদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড খোলা হয়নি।
জেলায় নতুন করে যে ২৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন, ভাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন করে ৬ জন, নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন এবং ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন করে ৩ জন ভর্তি রয়েছেন।
জানুয়ারি থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৯।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ৪৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড, তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-২ এবং ওই তলায় নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে। অন্য রোগীদের সঙ্গে রেখেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাতে ওই হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীরা শয্যা পেয়েছেন। দুটি পুরুষ ওয়ার্ডে বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী শয্যা পাননি। তাঁদের মেঝেতে এবং ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের শয্যা ১৯টি। ওই ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীসহ মোট ভর্তি আছেন ৭০ জন। তৃতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড ইউনিট-২-এ শয্যা ৩৪টি। ডেঙ্গু রোগীসহ সেখানে ভর্তি রয়েছেন ৭১ জন। তৃতীয় তলায় নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যা আছে ২০টি। সেখানে ডেঙ্গুসহ মোট রোগী ভর্তি আছেন ৫৩ জন। তবে এই ওয়ার্ডে অন্য রোগীরা মেঝেতে থাকলেও ডেঙ্গু রোগীরা মেঝেতে ছিলেন না।
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রাম থেকে আসা সালমা বেগম (৪৫) বলেন, ‘সাত দিন আগে ঢাকার বাসাবোতে ছেলের বাসা থেকে এসেছি। ওই দিন থেকেই মাথাব্যথা শুরু। পরদিন গা গরম থেকে জ্বর। দুই দিন নাপা ট্যাবলেট খাইছি; জ্বর না কমায় ৮ জুলাই হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করায় পজিটিভ আসে। এর পর থেকে হাসপাতালে ভর্তি আছি।’ তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার বেড পাইছি। এ কদিন শয্যা না পাওয়ায় মশারি টানাইতে কষ্ট হইছে।’
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বরইতলা এলাকা থেকে গতকাল এই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন হাবিবুর রহমান (৬২)। তাঁর স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫২) বলেন, ‘দুই দিন ধরে আমার স্বামী জ্বরে মাথা তুলতে পারছিল না। গতকাল দুপুরে টেকেরহাট ডেঙ্গু পরীক্ষা করে ধরা পড়ায় চিকিৎসকেরা ফরিদপুর আসতে বলেন। দুপুরে এসে হাসপাতালে বেড পাই নাই। মেঝেতে আছি। এখান দিয়ে মানুষ হাঁইটা গেলে তাঁদের পায়ের সঙ্গে আমাদের ধাক্কা লাগে।’
নগরকান্দার তালমা গ্রামের জিন্নাহ সরদার (৪২) বলেন, ‘শুনছি ঢাকা গেলে ডেঙ্গু হয়। গত দু-তিন মাসে তো আমি ঢাকা যাই নাই, বাড়িতে আছি। আমার এই রোগ ক্যামনে হইল বুঝলাম না।’ তিনি বলেন, ‘চার দিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি হইছি। চার দিন ধইরাই নিচে আছি। নার্সদের কইলে কয় বেড ফাঁকা নাই, নিচেই থাকেন। কোনোমতে তাই নিচেই চিকিৎসা নিতেছি। কবে ছাড়বে, তা–ও কিছু বলে নাই ডাক্তাররা।’
দ্বিতীয় তলায় পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স সালেকা সুলতানা বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতায় আমাদের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। মেডিসিনের অন্য রোগীদের সঙ্গে থাকায় বেশির ভাগ রোগী মশারি টানাতে চান না। ২৪ ঘণ্টাই মশারির নিচে থাকতে হয়, এটা অনেক রোগীকে বোঝাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক রোগী ও স্বজনেরা এসব নিয়ে আমাদের সঙ্গে তর্কও করেন।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এনামুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। তবে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা উচিত। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগীর চিকিৎসা চলছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ওই হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হবে।