স্কুলে যাওয়ার পথে ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যায় জরিত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ভালুকা-বাটাজোর সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ভালুকায় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক ও সহপাঠীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটার দিকে উপজেলার বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে ভালুকা-বাটাজোর সড়কে এ মানববন্ধন হয়।

নিহত ছাত্রীর নাম রাখিয়া সুলতানা। সে উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাটাজোর গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘দিনদুপুরে এক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসার পথে হত্যার শিকার হলো। হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, তার ফাঁসি চাই।’

এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে রিপন মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় রাখিয়া সুলতানার। কিছুদিন পর রিপন সৌদি আরব চলে যান। স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর রাখিয়ার ওপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বলে পরিবারের লোকজনের অভিযোগ। ছয় মাস আগে বাবার বাড়ি ফিরে আসে রাখিয়া। এক বছর বিরতি দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে মেয়েটি। এর মধ্যে স্বামী সৌদি আরব থেকে ফিরে এলেও আর শ্বশুরবাড়িতে যায়নি রাখিয়া।

স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাতে পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সমাপনী প্রস্তুতি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় রাখিয়া। বাড়ি থেকে আনুমানিক ১০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে কলাখেতে ওত পেতে থাকা কাপড় দিয়ে মুখ মোড়ানো ও মাথায় ক্যাপ পরা এক ব্যক্তি রাখিয়াকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন সে মা বলে চিৎকার করে দৌড়াতে শুরু করে। হামলাকারী পেছন থেকে ঘাড়, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মেয়েটিকে জখম করে। চিৎকার শুনে মা মাজেদা খাতুন দৌড়ে এসে পাশের ধানখেত থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাখিয়াকে উদ্ধার করেন। পরে মাজেদা খাতুনের ডাকচিৎকারে অন্য ব্যক্তিরা ছুটে আসেন। কিন্তু হামলাকারীকে তাঁরা ধরতে পারেননি।

পরে রাখিয়াকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বিকেলে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহম্মেদ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন। রাখিয়ার বাবার বাড়ি ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ১০ হাজার টাকা দেন ইউএনও।

রাতে রাখিয়ার বাবা আবদুল রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকে রাখিয়ার স্বামী রিপন আত্মগোপনে চলে যান। তার শ্বশুর–শাশুড়ি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাখিয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের জটলা। মেয়ের মৃত্যুর শোকের কান্নায় মাজেদা খাতুনের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মাজেদা খাতুন বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন শুরু করেন। মানসিক নির্যাতনে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসে সে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনই আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজল হোসেন বলেন, রাখিয়া সুলতানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার শ্বশুর মানিক মিয়া ও শাশুড়ি খেন্ত বেগমকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। রাখিয়ার স্বামী রিপন মিয়া ২ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন। ঘটনার পর থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি সন্দেহজনক।