দুবারের ইউপি সদস্য বিক্রি করেন চা-পান

চায়ের দোকানই তাঁর ব্যক্তিগত ও নির্বাচনী কার্যালয়। সবাই কথা বলতে পারেন খোলামেলা।

নিজের দোকানে চা বানাচ্ছেন ইউপি সদস্য ফরিদা খাতুন। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বশোয়া বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

স্বামী অনেকটা ভবঘুরে। তাঁর আয়রোজগার নেই। সে জন্য জীবন ও জীবিকার তাগিদে ফরিদা খাতুন (৩৭) নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়েন জীবনযুদ্ধে। বাজারের পাশে একখণ্ড অন্যের জমিতে খুপরি বানিয়ে শুরু করেন চা বিক্রি। সঙ্গে পানও বিক্রি করেন। চা-পান বিক্রি করতে করতেই ইউপি নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে দাঁড়ান। ভোটে বিজয়ীও হন। তিনি এখন নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য। পরপর দুবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হলেও ছাড়েননি চায়ের দোকানের কাজ। সংসারের খরচ মেটাতে প্রায় আট বছর ধরে বিক্রি করছেন চা-পান।

ফরিদা খাতুন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। তিনি ইউনিয়নের বশোয়া গ্রামের বাসিন্দা। বশোয়া বাজার এলাকায় তাঁর চায়ের দোকান। 

স্থানীয় লোকজন জানান, চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যদের ভাগ্য হঠাৎ পরিবর্তন হলেও ফরিদা এ ক্ষেত্রে ভিন্ন। তাঁর সততার কারণেই সাদামাটা জীবনে আসেনি পরিবর্তন। পরিষদ ও দোকানদারির ফাঁকে সময় পেলেই ছুটে যান ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। খবরও রাখেন
তাঁদের সুখ-দুঃখের। চায়ের দোকানই তাঁর ব্যক্তিগত ও নির্বাচনী কার্যালয়। সবাই কথা বলতে পারেন খোলামেলা। সবার কাছেই ব্যাপক জনপ্রিয় এই সদস্য।

বশোয়া বাজারে ঢুকতেই প্রথম দোকানটিই ফরিদার। তাঁর দোকানের বাঁশের চরাটে (বেঞ্চ) বসে চা পান করেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ইউপি সদস্য হয়েও কেন চা বিক্রি করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদা বলেন, সরকার ৩ হাজার ৬০০ টাকা ভাতা দেয়। এ টাকা তাঁর পরিষদে যাওয়া-আসা আর জনগণের পেছনেই খরচ হয়ে যায়। অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন না। সে জন্য সংসারের চাল, ডাল, তরকারি কেনার জন্য তিনি চা বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ফরিদা বলেন, তিনি সকালে পরিষদ আর জনগণের জন্য কাজ করেন। আর বিকেল চারটা থেকে তিনি চা-পান বিক্রি করেন। দৈনিক তিনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করছেন। দোকানে বসার কারণে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই তাঁদের সুখ–দুঃখের কথা তাঁকে জানাতে পারেন। জনগণ তাঁকে খুব ভালোবাসে। চা বেচতে বেচতেই তিনি দুবারের নির্বাচিত মেম্বার।

গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আলতাফ মোল্লা বলেন, ‘মেম্বর মানুষ চা বেচে খান, তা কোনো দিন দেখিনি। মেম্বর (ফরিদা) খুব ভালো মনের মানুষ। সকালে রাঁধাবাড়া করে খান, আর সারা দিন এবেলা সেবেলা ঘুরে বিকেলে দোকান খোলেন।’

শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বলেন, ফরিদাসহ তাঁর পরিষদের তিনজন নারী মেম্বারই খুব গরিব। তিনি পরিষদ থেকে তাঁদের সহযোগিতা করে থাকেন।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও ফরিদা খাতুন চা বিক্রি করে সংসার চালান। এতে তিনি খুব গর্বিত এবং ফরিদাকে সম্মান করেন। ফরিদার জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করবেন।