বদরগঞ্জে ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় মারামারি

ঘুষ
প্রতীকী ছবি

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় ভূমি কার্যালয়ের সেই সার্ভেয়ার সাবিনা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে এবার ঘুষ নেওয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন একই কার্যালয়ের অফিস সহায়ক হাসান শাহরিয়ার। শুধু তা–ই না, কাজ না করার কারণে ঘুষের টাকা ফেরত চাওয়ায় ওই সার্ভেয়ারের স্বামী তাঁকে মারপিটও করেছেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাসান শাহরিয়ার ওই সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এর আগেও ওই সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক কৃষক জেলা প্রশাসক বরাবর ঘুষ গ্রহণের লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইউএনও ওই অভিযোগের তদন্তকাজ শেষ করে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। অচিরেই তা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠাবেন বলে ইউএনও আজ রোববার জানিয়েছেন।

অফিস সহায়ক হাসান শাহরিয়ার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি নিজে উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে এবং সাবিনা ইয়াছমিন সার্ভেয়ার পদে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে কর্মরত। ভূমি কার্যালয়ে চাকরি করার সুবাদে স্থানীয় জনসাধারণ, সার্ভেয়ার, তহশিলদার ও নাজিরের সঙ্গে তাঁকে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়। ভূমি কার্যালয়ে নামজারী করার বিষয়ে সার্ভেয়ার সাবিনা ইয়াছমিন তাঁকে (হাসান শাহরিয়ারকে) জানান, তিন হাজার করে টাকা দিলে নামজারি বা জমি খারিজের অনুমোদন দ্রুত করানোর ব্যবস্থা নেবেন। পরে কার্যালয়ে আসা সাধারণ লোকজনের অনুরোধে হাসান শাহরিয়ার ওই সার্ভেয়ারকে ৫ মার্চ জমির চারটি নামজারি করতে ১২ হাজার টাকা দেন। পরবর্তী সময়ে ওই সার্ভেয়ার কাজ না করে টালবাহানা শুরু করলে তিনি বিষয়টি বদরগঞ্জ ভূমি কার্যালয়ের নাজির সাদেকুল ইসলামকে জানান।

সাদেকুল তখন সার্ভেয়ারের কাছ থেকে টাকা ফেরত এনে তাঁকে দিলে নামজারি করে দেবেন বলে হাসান শাহরিয়ারকে জানান। এরপর ১১ মার্চ হাসান শাহরিয়ার ঘুষের ১২ হাজার টাকা ফেরত চাইলে ওই সার্ভেয়ার তাঁকে হুমকি দিয়ে কার্যালয়ের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে নালিশ করেন। এরপর হাসানকে সহকারী কমিশনার নয়ন কুমার সাহা ফোন দিয়ে সতর্ক করেন এবং তিনটি নামজারির কাগজপত্র অনুমোদন করে দেন।  

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২১ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হাসান শাহরিয়ার উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সামনের একটি চায়ের দোকানে গেলে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সার্ভেয়ারের স্বামী আবদুস সালাম সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ সময় তিনি দৌড়ে ভূমি কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে নাজির সাদেকুল ইসলামের কাছে আশ্রয় চাইলে নাজির তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘ব্যাটা, তুমি বাহাদুর হইছ, তোমার খবর আছে।’ এ সময় সার্ভেয়ার সাবিনা ইয়াছমিনও লাঠি হাতে তাঁকে মারতে তেড়ে আসেন।

আজ বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে হাসান শাহরিয়ার অভিযোগ করে বলেন, ওই সার্ভেয়ার ও তাঁর স্বামীর হুমকির কারণে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘ওই অফিস সহায়কের কাছে আমি কোন ঘুষ নিয়েছি এমন কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারবেন না। সব ষড়যন্ত্র। আমার স্বামী তাঁকে কোন মারপিট করেননি।’

এ ব্যাপারে সার্ভেয়ারের স্বামী আবদুস সালামের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও আবু সাঈদ বলেন, ‘সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে অফিস সহায়কের করা ঘুষ নেওয়ার লিখিত অভিযোগটি দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এর আগেও একজন কৃষক ওই সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ করেছিলেন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছিল। পরে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই তা জমা দেওয়া হবে।’

উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষ লেনদেনকারী উভয়ে অপরাধী। ঘটনাটি গুরুত্বসহ তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ২৬ জানুয়ারি সার্ভেয়ার সাবিনা ইয়াছমিন ও নাজির সাদেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম আলোয় ‘সার্ভেয়ার ও নাজিরের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।