নদীর মাটি লুটের ঘটনায় আটক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো পুলিশ ফাঁড়ি থেকে
সাতক্ষীরায় বেতনা নদী অবৈধভাবে খনন করে মাটি লুটপাটের ঘটনায় আটক এক ব্যক্তিকে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এতে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন সাতক্ষীরা সদর থানার ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহাবুর রহমান ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান। তাঁদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) সাতক্ষীরার উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে নেহালপুর ও আশপাশের এলাকায় বেতনা নদীর মাটি অবৈধভাবে কেটে ট্রলিতে করে সরিয়ে নিচ্ছিল একটি চক্র। এ চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন সদর উপজেলার ধলিহর সানাপাড়া এলাকার কেসমত আলী।
সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের এক ঠিকাদার বেতনা নদীর মাটি বৈধভাবে কেনেন। বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অর্ণব দত্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানান এবং মাটি যাতে কেউ লুটপাট না করে, সে বিষয়ে বহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সোহরাব হোসেনকে নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনার পর পুলিশ ফাঁড়ির পক্ষ থেকেও ট্রলিচালকদের সতর্ক করা হয়।
ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সোহরাব হোসেন জানান, আজ বুধবার ভোরে কেসমত আলীর নেতৃত্বে সাত–আটজন ব্যক্তি নেহালপুর স্লুইসগেট এলাকায় খনন করা মাটির স্তূপ ট্রলিতে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতে পারেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় কার্যসহকারী রাজকুমার মণ্ডল ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটতে বাধা দিলে কেসমত আলী ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর ওপর চড়াও হন।
একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে ট্রলিভর্তি মাটিসহ কেসমত আলীকে আটক করে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কেসমত আলীর ভাই রহমত আলী, ভাতিজা বাবুর আলীসহ ২৫ থেকে ৩০ জন পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালান। তাঁরা ফাঁড়ির ফটক ভেঙে কেসমতকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে এএসআই মাহাবুর রহমান ও সিপাহি মেহেদী হাসানকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে হামলাকারীরা কেসমত আলীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সাহেব আলী ও নূর হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েও কেসমত আলীর নেতৃত্বে বেতনা নদীর মাটি লুটপাট হতো। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অন্য একটি পক্ষ তাঁর মাধ্যমে আবারও মাটি কাটা শুরু করে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় আজ বিকেলে কেসমত আলী, বাবুর আলী, রহমত আলীসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের প্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।