বাঁধে বালু, স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

স্থানীয়রা বলছেন, জোয়ার থেকে রক্ষা করতে বাঁধটি সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বালু দেওয়ার কারণে বাঁধ টিকবে না।

দুই পাশে মাটি ফেলে ভেতরে দেওয়া হচ্ছে বালু। এভাবেই সংস্কার করা হচ্ছে ভৈরব নদের তীরের বাঁধ। সম্প্রতি বাগেরহাট সদর উপজেলার চরগাঁ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাট সদর উপজেলায় ভৈরব নদের তীরে বালু দিয়ে বাঁধ সংস্কার করার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

ষাটের দশকে ভৈরব নদের পাশ দিয়ে প্রথম বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ভাতছালা থেকে মুনিগঞ্জ পর্যন্ত বাঁধের তিন কিলোমিটারে সংস্কার হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জোয়ার, জলোচ্ছ্বাসের প্লাবন থেকে রক্ষা করতে বাঁধটি সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু বালু দেওয়ার কারণে বাঁধ টিকবে না। কাজ শেষের আগেই বাঁধের কয়েকটি অংশে ফাটল ও ধসে গেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও অভিযোগ করেন, সংস্কারকাজের জন্য জোর করে স্থানীয় ব্যক্তিদের বসতবাড়ি ও জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধের গোড়া এবং নদী থেকে বালুচরের মাটিও নেওয়া হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট শহরের বিপরীতে ভৈরব নদ পারের ভাতছালা-মুনিগঞ্জ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বাঁধে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লাখ টাকা। এর আওতায় আগে চেয়ে তিন থেকে চার ফুট উঁচু করা হবে বাঁধটি। জরুরি ভিত্তিতে নাজিরপুর উপপ্রকল্পের অধীন ডিপিএম বা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাঁধ তৈরির কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলাম। গত নভেম্বরে কাজ শুরু হয়। তিন মাস মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি জানুয়ারিতে। বাঁধ নির্মাণে মাটি কেনার জন্য বরাদ্দ নেই। এরই মধ্যে নির্মাণকাজের ৫০ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের সময় কিছুটা বাড়ানো হবে।

গত বৃহস্পতিবার ওই বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আশপাশের বিভিন্ন বাড়ি, বাগান, মাঠ, নদীর পাড় থেকে ছোট-বড় গর্ত, যেখান থেকে বাঁধের জন্য মাটি নেওয়া হয়েছে। মুনিগঞ্জ খেয়াঘাট থেকে লোকাল বোর্ড খেয়াঘাট পর্যন্ত এক্সকাভেটর দিয়ে নদ তীরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি-বালু তোলা হয়েছে। এতে বাঁধ লাগোয়া গর্ত তৈরি হয়েছে। সেই গর্তের মাটি-বালু দিয়ে মাঝে ফাঁকা রেখে দুপাশে উঁচু আইলের মতো তৈরি হয়েছে। লোকাল বোর্ড খেয়াঘাট থেকে ভাতছালার দিকে তৈরি করা এমন ফাঁকা স্থানের কিছুটা ভরাট করা হয়েছে বালু দিয়ে। যার কয়েকটি স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল ও ধস।

স্থানীয় চরগা গ্রামের মো. ডালিম শেখ বলেন, ‘এমন কাজের কথা তো কোথাও শুনিনি। আমাগো বাড়ি-ঘর, বাগান, উঠান সব জায়গা থেকে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। বাঁধের কাজ হচ্ছে, এলাকার সবার ভালো হবে। কিন্তু যেভাবে ১০-১৫ ফুট গভীর করে মাটি তুলে নিছে, এখন তো আশপাশ দিয়ে সব ধসে যাবে।’

চরগা গ্রামের ফাতেমা জোহরা বলেন, ‘বাড়ির সামনে রাস্তা হচ্ছে। আমরা মাটি দিতিও চাইছি। দেখায় দিছি এখান দে মাটি নেন। তারপরও জোর করে আমার নারকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছপালা তুলে গভীর গর্ত করে মাটি তুলছে। নিষেধ করলেও শোনেনি। আমার ভবনের পাশের উঠানে ফাটল ধরিছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিযোগ করেন, সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আসাদুজ্জামান মোহন, তাঁর চাচাতো ভাই সুমন, চরগা গ্রামের মারুফ হোসেন ফকিরসহ কয়েকজন মাটি কাটায় ঠিকাদারকে সহায়তা করছেন। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মারুফ হোসেন ফকির বলেন, ‘এই রাস্তাটা আমাদের খুব দরকার ছিল। স্থানীয় মেম্বার (ইউপি সদস্য) বলায় মাটি কাটার সময় সঙ্গে ছিলাম। সবাই স্বেচ্ছায় এই কাজের জন্য মাটি দিচ্ছেন। কাউকে চাপ দেওয়া হয়নি। তবে রাস্তার পাশ দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে, তাতে অনেক জায়গায় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’ 

বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘২২ বছর পর এই বাঁধের সংস্কার হচ্ছে। এটা ইমার্জেন্সি কাজ। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমরা কাজটা করছি। এখানে মাটি কিনে নেওয়ার কোনো বরাদ্দ নেই।’

পাউবোর বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘দরপত্রে বলা আছে, মাটি ও লোকাল ম্যাটেরিয়ালদিয়ে কাজটি করতে হবে। এই কাজে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের কোনো সংস্থান আমাদের নেই।’ মাটি ছাড়া লোকাল ম্যাটেরিয়ালস্যান্ড (বালু) হতেপারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বালু ব্যবহার করা যাবে। তবে মাটির পরিমাণই বেশি থাকবে।