‘হারা মানেই হেরে যাওয়া নয়, তোমরা প্রত্যেকেই বিজয়ী’

প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্ন করছে এক শিক্ষার্থী। জিলা স্কুল, বরিশাল নগর, আজ শনিবার
ছবি: সাইয়ান

মাঘের প্রায় শেষ, শীতের তীব্রতা না থাকলেও চারদিক ঢাকা ছিল ঘন কুয়াশায়। এই কুয়াশা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে উপস্থিত হতে শুরু করে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের বিভাগীয় আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে আসেন অভিভাবকেরাও। বেলা বাড়লেও সূর্যের দেখা মিলছিল না। ঘড়িতে সকাল সাড়ে ৯টা বাজতেই শুরু হয় জাতীয় সংগীত। এতে গলা মেলায় শিক্ষার্থী ও অতিথিরা।

বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে জাতীয় পতাকা, আন্তর্জাতিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ও বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার এভাবেই ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের বরিশাল আঞ্চলিক পর্ব শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়রে প্রক্টর ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. খোরশেদ আলম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহফুজ আলম, বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। পরে অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক এম জসীম উদ্দীন। উদ্বোধনী এ পর্ব সঞ্চালনা করছেন বরিশাল বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম।

উদ্বোধনী পর্বে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় হার-জিত থাকবে। তোমরা যাতে সেই ফলাফল মেনে নিতে পারো, সেই কামনা করি। তবে হারা মানেই হেরে যাওয়া নয়; মনে রাখবে, এখানে উপস্থিত তোমরা প্রত্যেকেই বিজয়ী।’

অতিথি মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘যেকোনো ধরনের জ্ঞান অর্জনের জন্য গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের চর্চা করতেই হবে। কারণ, জ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান। ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এমন আয়োজন আমাদের শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে আরও বেশি অনুসন্ধিৎসু করে তুলবে, যা দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। এই অলিম্পিয়াড আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথম আলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি আলাকশিখা জ্বালিয়ে দিচ্ছে, যা দেশকে আলোকিত করবে। এ জন্য প্রথম আলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চলছে। তোমরাই সেই বিপ্লবকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে দেশ এ সভ্যতা।’

বিজয়ীদের মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। জিলা স্কুল, বরিশাল নগর, আজ শনিবার
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে পদার্থবিজ্ঞানচর্চার বিকল্প নেই। কারণ, পদার্থবিজ্ঞান ছাড়া বিজ্ঞান চলে না। এটা একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বটে। তবে এটা মূলত পদার্থবিজ্ঞানের জন্য ভালোবাসা। এখানে পাস-ফেলের কোনো ব্যাপার নেই। তোমরা পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার জন্যই এই পরীক্ষা দিচ্ছ বলে আমার বিশ্বাস।’

উদ্বোধনী পর্বের শেষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে জিলা স্কুলের অডিটরিয়ামে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ম্যাজিক শো ও প্রশ্নোত্তর পর্ব। অনুষ্ঠানে জাদু প্রদর্শন করেন জাদুশিল্পী রাজীব বসাক। প্রশ্নোত্তর পর্বে অতিথিরা শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। এসব প্রশ্ন ছিল যেমন বুদ্ধিদ্বীপ্ত, তেমনই চমকপ্রদ। বরিশাল জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসিফ আবিদের প্রশ্ন ছিল, ফোরথ ডাইমেনশন কী? পটুয়াখালী জুবিলি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অমিত দাসের প্রশ্ন ছিল, ফোটনকণা ভর না থাকলেও ভরবেগ আছে কীভাবে? ভোলা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী আহসান হাবিবের প্রশ্ন ছিল, ছায়াপথের নক্ষত্রগুলো কাকে কেন্দ্র করে ঘোরে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের জবাব দেন গোলাম দস্তগীর আল কাদেরী, মো. খোরশেদ আলম, মো. মাহফুজ আলম। শিক্ষার্থীরা মজার মজার এবং কৌতূহলোদ্দীপক এসব প্রশ্নের জবাব পেয়ে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শিক্ষকদের।

১৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে চারটি ক্যাটাগরিতে। পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা এ ক্যাটাগরি, সপ্তম-অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা বি ক্যাটাগরি, নবম-দশম শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা সি ক্যাটাগরি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমানের শিক্ষার্থীরা ডি ক্যাটাগরি।

২০২৩ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হবে ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মতো এবারও দেশব্যাপী ১৩তম ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩ আয়োজন করা হচ্ছে। বাছাইপর্বের নির্বাচিতদের নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে আঞ্চলিক ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ঢাকা ও যশোর আঞ্চলিক পর্ব। এ পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে অফলাইনে, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভেন্যুতে। এরপর আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজিত হবে জাতীয় উৎসব। পরে জাতীয় উৎসবের বিজয়ীদের নিয়ে ক্যাম্প আয়োজন করা হবে। ক্যাম্প শেষে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হবে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড দল। ওই দলই জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করছে বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো। এ ছাড়া ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে থাকছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা। টেকনিক্যাল পার্টনার হিসেবে আছে বিডিকম।
দেশের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে ২০১১ সাল থেকেই আয়োজিত হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড। এবারও একই উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ২০২৩।

বরিশাল অঞ্চলে এবারের ফিজিক্স অলিম্পিয়াড পর্বে চার ক্যাটাগরিতে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে তাদের সনদ, মেডেল ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। পরে বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেওয়া হয়।