নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ

গোপালগঞ্জ-১ (মুকসুদপুর-কাশিয়ানী একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক খানের (নৌকা) কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাবির মিয়ার (ঈগল) সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে মুকসুদপুর উপজেলার মোচনা ইউনিয়নের নওহাটা বাজারে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর তিনজন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মোচনা ইউনিয়নের নওহাটা গ্রামের নুর আলম শেখ, তাঁর ভাগনে মুহিদ ও ভাতিজা রাব্বি শেখ। তাঁদের মধ্যে নুর আলমকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন তিনি বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম ভক্ত পিংকু বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় নুর আলম নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর কপাল, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে হাতুড়ি বা অন্য যেকোনো কিছুর আঘাত হতে পারে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলছেন, গাড়ি ও মোটরসাইকেল ক্রসিং নিয়ে একজনের সঙ্গে সামান্য বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে। এটা নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো বিষয়ই নয়।

আহত নুর আলম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, মোচনা ইউনিয়নের নওহাটা বাজারে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গতকাল বিকেলে নির্বাচনী সভা করছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম সিকদার। তখন টেকেরহাট থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। তিনি নওহাটা বাজারে পৌঁছালে মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে নৌকার প্রার্থীর ২০-২৫ জন সমর্থক তাঁর ওপর হামলা করেন। এ সময় কয়েকজন তাঁকে হাতুড়িপেটা করেন। পরে অচেতন অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নুর আলম শেখ অভিযোগ করে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাবির মিয়াকে সমর্থন করায় এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা তাঁর ওপর হামলা করেছেন। আগেও একাধিকবার তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন। এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কাবির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন গতকাল তাঁর কর্মী-সমর্থকদের ওপর অতর্কিতে হামলা করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সামনে হামলা হয়েছে। আগেও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর ছেলে, মোচনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমদাদসহ কয়েকজন। প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন। তিনি এ নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে মোচনা ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইমদাদ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। আমি কোনো ব্যক্তিকে হামলা করতে বলিনি। তা ছাড়া আমার কোনো বাহিনী নেই।’

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম সিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছি। এখানে কোনো ঝামেলা নেই। ভোটাররা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করবে। গতকালের ঘটনা আমি মোবাইলে জানতে পেরেছি, ওই সড়ক দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি যাচ্ছিল। এ নিয়ে একজনের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। এটা নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো বিষয় নয়।’

মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, গতকাল মারধরের ঘটনায় নুর আলম শেখ বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। এখনো কাউকে প্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ফারুক খান। তাঁর বিরুদ্ধে মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মো. কাবির মিয়া। তাঁরা দুজন ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টির সহিদুল ইসলাম মোল্যা (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) শেখ মো. আবদুল্লাহ (আম) ও তৃণমূল বিএনপির মো. জাহিদুল ইসলাম (সোনালী আঁশ)। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৩ হাজার ১০০।